দুর্দশাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংক একীভূত হচ্ছে এক্সিম ব্যাংক
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি দেশের প্রথম একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় হাটছে এক্সিম ব্যাংক এবং চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক। ইতোমধ্যে এক্সিম ব্যাংকের বোর্ড সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে এবং এতে একমত হয়েছেন বোর্ডের অধিকাংশ পরিচালক। বৃহস্পতিবার এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটির একটি সূত্র।
এছাড়া পদ্মা ব্যাংকও এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে। তবে শরিয়াভিত্তিক এক্সিম ও গতানুগতিক পদ্মা ব্যাংক একীভূত হওয়ার পরে তাদের নাম কী হবে তা ব্যাংকগুলো সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, মার্জার প্রক্রিয়া বিশ্বে নতুন নয়, অন্য দেশেও হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। তারা যাতে নিজেরাই মার্জারে যেতে পারে। ব্যাংকগুলো যদি একীভূত হওয়ায় সম্মত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকে তাহলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আর একীভূত হওয়ার পরে তাদের নাম কী হবে তা ব্যাংকগুলো সিদ্ধান্ত নেবে।
এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ফিরোজ হোসেন বলেন, একীভূতকরণের বিষয়ে আলোচনা চলছে। আজ এ বিষয়ে মিটিং হবে এবং মিটিং শেষে সিদ্ধান্ত হবে। একীভূত হতে পারে। মিটিংয়ের পরেই জানা যাবে। এই বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের এক পরিচালক বলেন, আপাতত বেসরকারি পদ্মা ব্যাংককে আমাদের ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই এই সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
জানা গেছে, দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমানো ও ভেঙে পড়া সুশাসন ফেরাতে সম্প্রতি ১৭ কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করে দেয়ার মতো পরিকল্পনাও রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় ‘রোডম্যাপ’ নামের প্রস্তাবটি পাস হয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের সেগুলো তুলে ধরেন। কর্মপরিকল্পনার ১১টি খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত এবং বাকি ছয়টি মূলত ব্যাংকে সুশাসন ফেরানোর রূপরেখা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত রোডম্যাপের প্রধান লক্ষ্য হলো ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ১০ ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে সীমার বাইরে দেয়া ঋণ, বেনামি স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঋণ এবং জালিয়াতি বা প্রতারণার মাধ্যমে দেয়া ঋণ বিতরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে।
ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে, এমন আলোচনার মধ্যে ৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দেয়, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংক সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো জানায়, এ সময়ের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছায় একীভূত না হলে আগামী বছর থেকে তাদের চাপ দিয়ে একীভূত করা হবে। বৈঠকে আরও জানানো হয়, দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদ (ঋণ) কিনে নেবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি)। ফলে একীভূত হওয়ার কারণে ভালো ব্যাংকগুলোর খারাপ হয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ব্যাংক একীভূত হওয়া নিয়ে নানা ধরনের অনুমানভিত্তিক কথা হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় ব্যাংক একীভূত হোক না কেন, এতে আমানতকারীদের স্বার্থের কোনো হানি হবে না। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থও দেখা হবে।
তিনি বলেন, যেসব ব্যাংক একীভূত হবে, ওই ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য ভালো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। এরপরই একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ব্যাংক একীভূত হলে তা হবে যথাযথ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। তিনি আরো বলেন, একীভূত হওয়ার পর ভালো ব্যাংক যাতে দুর্বল না হয় ও দুর্বল ব্যাংক যাতে ভালো হয় এই দুটিই দেখা হবে।