শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফেকচারিংয়ের সাথে একীভুতকরণ করা হয়েছে তালিকাভুক্ত নয় পার্ল পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের। একীভুতকরণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোন ধরণের সুবিধা পায়নি। তবে বড় ধরণের ক্ষতি স্বীকার হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কোন ধরণের সুবিধা না পেয়েও প্রতি শেয়ার ৮৩ টাকা করে লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। তবে কমিশন বলছে আইন না মেনে কাজটি হয়ে থাকলে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএসইর সূত্র মতে, রেকর্ড তারিখের আগের দিন প্রতিটি শেয়ারের দর ছিলো ২২০ টাকা ৯০ পয়সা। দর সমন্বয়ের পরের দিন মঙ্গলবার এটি হয়েছে ১৩৭ টাকা ৯০ পয়সা। এতে করে প্রতিটি শেয়াররে বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লোকসান গুনতে হয়েছে ৮৩ টাকা। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজারের বিভিন্ন জটিলতার ফান্দে পরে বেকাদায় আছি আমরা। এর মধ্যে বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফেকচারিং-পার্ল পেপার একীভূতকরণে নি:স্ব হয়ে গেছি। আমাদের দেখার কেউ নেই।

তারা বলছেন হঠাৎ এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এতবড় ক্ষতির দায়ভার কে নেবে এই প্রশ্নও তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। দুই প্রতিষ্ঠানের একীভুতকরণে যেখানে বিনিয়োগকারীদের কোনো লাভ নেই, সেখানে এর লোকসানের দায়ভার কেন তাদের ওপর পড়বে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিকে।

এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীরা কোন ধরণের সুবিধা না পেলে দায় নেব কেন? যদি আইনের বাহিরে গিয়ে কিছু হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এই বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গত বছরের ১২ জুন পার্ল পেপারের সাথে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটির পর্ষদ। বিডি মনোস্পুলের ১৮৮তম পর্ষদ সভায় এ-সংক্রান্ত স্কিমে পর্ষদে অনুমোদন নেয়া হয়।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর দেয়া খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই একীভূতকরণের প্রস্তাবটি গ্রহণ করে। এতে মনোস্পুল পেপারের সঙ্গে পার্ল পেপার মার্জ বা একীভূত হয়ে যায়। ফলে দুটি প্রতিষ্ঠানই মনোস্পুল পেপারের আওতাধীন হয়ে যায়। স্কিম অনুযায়ী পার্ল পেপারের ১টি শেয়ারের বিপরীতে মনোস্পুল পেপারের ০.৪০টি শেয়ার দেওয়া হয়।

তবে নতুন কোন শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হয়নি। শেয়ার না দিলেও দর সমন্বয়ের দায় নিতে হয়েছে তাদের। এতে কোম্পানিটির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাথায় হাত পড়ে। হঠাৎ করে এত বড় সমন্বয়ে দিশেহারা হয়ে যায় বিনিয়োগকারীরা।

তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপারের শেয়ারদর ছিল ২২০ টাকা ৯০ পয়সা। যা সোমবার একদিনের ব্যবধানে ৬৯ টাকা ৩০ পয়সা কমে দাঁড়ায় ১৫১ টাকা ৬০ পয়সায়। দিনের শুরুতে ১৩৭ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন শুরু হলে এতে ৮৩ টাকা দর হারায় শেয়ারটির বিনিয়োগকারীরা। পর দিনভর উঠানামার শেষে ১৫১ টাকা ৬০ পয়সায় গিয়ে থামে। এতে বিপুল পরিমাণ লোকসান গুণতে হয় এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারধারী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

জানা যায়, দুটি প্রতিষ্ঠান একীভুতকরণ স্কিমে বলা হয়, পার্ল পেপারের ১ শেয়ারের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ হারে মনোস্পুল পেপারের শেয়ার হবে। এতে করে মনোস্পুল পেপারের বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা ১টি শেয়ার হয়ে যা শূন্য দশমিক ৪০টি শেয়ার সমমূল্য। অথবা পার্ল পেপারের একটি শেয়ারের বিপরীতে মনোস্পুল পেপারের আড়াইটি শেয়ার সমমূল্য।

তথ্য বলছে, দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা, বিএসইসিকে আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়া, লভ্যাংশ প্রদান না করা ও সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন না করাসহ একগুচ্ছ অনিয়মের কারণে ২০০৯ সালে মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি লিমিটেডকে ওটিসি মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে মুনাফায় ফেরার পাশাপাশি সুশাসনে উন্নতি করায় গত বছরের ১৩ জুন ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনা হয়।

১৯৮৯ সালে পুঁজিবাজারে কাগজ ও মুদ্রণ খাতে তালিকাভুক্ত হয় বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৩৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ারের ৪৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে, ৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে আর বাকি ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। কোম্পানিটি সবশেষ গত বছরে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়।