ডরিন পাওয়ারের তিনটি কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধের ফলে পুঁজি নিয়ে দু:শ্চিন্তায়
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধের ফলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। এর মধ্যে আগে থেকেই দুটি কেন্দ্র বন্ধ ছিল। বাকি একটি সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ফেনীতে অবস্থিত ডরিন পাওয়ারের ২২ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন ১৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ডরিন পাওয়ারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে, যা এখনো বিবেচনাধীন। ফেনীর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পিপিএর মেয়াদ ১৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বা মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এর উৎপাদন বন্ধ থাকবে।
ডরিন পাওয়ার কোম্পানির তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এর একটি হচ্ছে ফেনীতে। অপর দুটি হচ্ছে টাঙ্গাইল এবং নরসিংদীতে। তিনটি কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে নরসিংদীতে অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং গত ১১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে টাঙ্গাইলে অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) ২ টাকা ৮৩ পয়সা, আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৭৬ পয়সা। গত ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫২ টাকা ৯৪ পয়সায়।
জানা যায়, ২০২৩ অর্থবছরে উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমসের পর্ষদ। আলোচ্য অর্থবছরে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৫৬ পয়সা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ৯ টাকা ২১ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা ৪৭ পয়সায়, আগের অর্থবছরে যা ছিল ৪৭ টাকা ৪৬ পয়সা।
২০২১-২২ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ারের পাশাপাশি উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে বাকি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছিল ডরিন পাওয়ারের পর্ষদ। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ১০ টাকা ৩১ পয়সা। ৩০ জুন-২০২২ শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৫৩ টাকা ১৫ পয়সায়।
২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে ডরিন পাওয়ার। এর মধ্যে সব শেয়ারহোল্ডারকে ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। এ ছাড়া উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে বাকি শেয়ারহোল্ডারদের ১৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। আলোচ্য অথর্বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৭ টাকা ২৩ পয়সা এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ২২ পয়সায়।
২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল ডরিন পাওয়ার। এর মধ্যে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির সব শেয়ারহোল্ডার। আর ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছিল উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের। সর্বশেষ ক্রেডিট রেটিং অনুসারে ডরিন পাওয়ারের ঋণমান দীর্ঘ মেয়াদে ‘ডাবল এ’ ও স্বল্প মেয়াদে ‘এসটি-টু’।
এর অর্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়া হলে সেটা ঠিক সময়ে পরিশোধ করার ক্ষমতা কতটা আছে, সেটাই ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। ক্রেডিট রেটিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সক্ষমতা, অতীত ইতিহাসের ভিত্তিকে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।
সেই রেটিং থেকে ক্রেতারা বা ঋণদাতা অথবা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে পারেন, তাদের সঙ্গে লেনদেন করা কতটা নিরাপদ। তারা ঋণ পরিশোধে কতটা সক্ষম। বিভিন্ন ক্যাটাগরির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাগ করা হয়ে থাকে। এটা একধরনের মার্কিং সিস্টেম। যেমন ‘এএএ’, ‘বিএ’, ‘সি’ ইত্যাদি।
প্রতিষ্ঠানের মূলধন, আমানত, দেশি ও বৈদেশিক বিনিয়োগের খাত, ঋণের খাত, ঋণ পরিশোধের হার ইত্যাদি সূচক বিবেচনায় নিয়ে এটি নির্ধারণ করা হয়। ‘এএএ’ মানে হচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক রেকর্ড খুব ভালো এবং ঋণ ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ‘বিএ’ মানে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের কিছু ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে রেটিং ‘সি’ মানে হচ্ছে সেখানে আসল ও মুনাফা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
২০০৮ সালের নভেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে ডরিন পাওয়ার জেনারেশন্স অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালে ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নর্দান ও সাউদার্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। ডরিন পাওয়ার ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৮১ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৮ কোটি ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯০২। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৬৬ দশমিক ৬১ শতাংশ শেয়ার। এ ছাড়া ১৯ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।