শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি রানার অটোমোবাইলস পিএলসি বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে। এতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রানার অটোমোবাইল পিএলসির রাজস্ব আয় বাড়লেও লোকসান থেকে বের হতে পারছে না। সংশ্লিস্টরা বলছেন, রানারের উৎপাদিত থ্রি-হুইলার বিক্রি বাড়লেও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ার কারণে লোকসান বাড়ছে।

রানার অটোমোবাইলসের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আয় হয়েছে ২০৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আয় ছিল ১৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আয় বেড়েছে ৭৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

রানার অটোমোবাইলসের কোম্পানি সেক্রেটারি মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে থ্রি-হুইলার ছাড়া অন্য পণ্যগুলোর বিক্রি কমেছে। এতে তাদের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নতুন সিএনজি লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। এ দুটি শহরে লাইসেন্স দেওয়া শুরু হলে তাদের পণ্যের চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন। তবে সারা দেশের অন্যান্য জেলায় লাইসেন্স অব্যাহত রয়েছে। এতে তাদের থ্রি-হুইলারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ২০ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ২ টাকা ৮৯ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি লোকসান কমলেও সার্বিকভাবে লোকসান থেকে বের হতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির ২১ কোটি ৬১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বাজাজের সহযোগিতায় দেশে এলপিজি ও সিএনজিচালিত তিন চাকার অটোরিকশা তৈরি ও বাজারজাত শুরু করেছে রানার অটোমোবাইলস।

থ্রি-হুইলার উৎপাদনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ময়মনসিংহের ভালুকায় ১০ একর জমির ওপর নতুন কারখানা স্থাপন করেছে। এ কারখানা স্থাপন করতে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এ কারখানায় বছরে প্রায় ৩০ হাজার থ্রি-হুইলার উৎপাদন সম্ভব বলে জানানো হয়েছে।

রানার গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি রানার অটোমোবাইলসের যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালে। এ বছরই দায়াং বাইক বিক্রি শুরু করে কোম্পানিটি। ময়মনসিংহের ভালুকায় গড়ে তোলা হয় কারখানা। যেখানে বার্ষিক এক লাখ পিস মোটরসাইকেল উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। ২০০৯ সালে বাইক সংযোজন এবং ২০১২ সালে বাইক উৎপাদন কারখানা চালু করে। ২০১৭ সালে রানার অটোমোবাইলস প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে নেপালে মোটরসাইকেল রপ্তানি শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ভুটানেও রপ্তানি শুরু হয়।

দুই দেশেই তাদের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। দেশের বাজারে ৮০ থেকে ১৬৫ সিসি সক্ষমতার মোটরসাইকেল বিক্রি করছে কোম্পানিটি। আর বিদেশে রপ্তানিকৃত মোটরসাইকেল ২০০ সিসি সক্ষমতার। সম্প্রতি সরকারের কাছ থেকে কোম্পানিটি ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল উৎপাদনের অনুমোদন পেয়েছে।

মোটরসাইকেলের পাশাপাশি এলপিজি ও ডিজেলচালিত থ্রি-হুইলার উৎপাদন করছে রানার অটোমোবাইলস। এ ছাড়া আইশার ব্র্যান্ডের ট্রাক, পিকআপ ও ট্রাক্টরও বাজারজাত করছে। কোম্পানিটি বর্তমানে বেশ কয়েকটি মডেলের ইলেকট্রিক স্কুটারও বাজারে এনেছে। মূলত ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ায় এ ধরনের গাড়ির চাহিদা রয়েছে দেশে। পাশাপাশি অটোমোবাইল ও মেকানিক্যাল পণ্যের ব্যবসাও রয়েছে। অবশ্য সর্বশেষ হিসাব বছরে সীমিত পরিসরে এ ব্যবসা চালু ছিল বলে জানিয়েছেন কোম্পানির নিরীক্ষক।

২০১৯ সালে রানার অটোমোবাইলস দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। সেই সময় পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ১০০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে তারা। আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ যন্ত্রপাতি ক্রয়, গবেষণা ও উন্নয়ন, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ খাতে ব্যয় করেছে কোম্পানিটি।

পুঁজিবাজারে আসার তিন বছর পরেই ব্যবসায়িকভাবে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে রানার অটোমোবাইলস। টানা দুই হিসাব বছর ধরে গুনতে হচ্ছে লোকসান। গত হিসাব বছরে এর আগের হিসাব বছরের তুলনায় কোম্পানিটির প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার ব্যবসা কমেছে।

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির গত পাঁচ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির ব্যবসা থেকে আয় হয়েছিল ১ হাজার ১১৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আলোচ্য অর্থবছরে ৬৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছিল। এরপরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় হয় ৯৪৬ কোটি ৪৯ লাখ এবং নিট মুনাফা ছিল ৩৪ কোটি ৮ লাখ টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরে রানার অটোমোবাইলসের আয় ১ হাজার ১৪ কোটি ১৮ লাখ এবং নিট মুনাফা ছিল ৪৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ১ হাজার ১১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আলোচ্য বছরে কোম্পানিটি প্রথমবারের মতো ২৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা লোকসান গুনেছিল। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রানার অটোমোবাইলসের আয় হয়েছে ৬৬২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার ও ট্রাক বিক্রি কমে যাওয়ায় এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আলোচ্য অর্থবছরে রানার অটোমোবাইলসের ২১ কোটি ২৯ লাখ টাকা কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে।