শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর ফলে টানা চার কার্য়দিবস দরপতন দেখা গেল পুঁজিবাজারে। এই পতনের কারণ প্রফিট টেকিং হলেও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন ভিন্ন কথা। তাছাড়া টানা ১০ কার্যদিবস উত্থানের পর পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা এই পতনের কারণ শুধু মুনাফা গ্রহণ বললেও বিশ্লেষকদের বলছেন, মুনাফা গ্রহণের সঙ্গে অর্থনৈতিক বিভিন্ন টানাপোড়েন এবং কিছু মৌসুমি ফান্ড পুঁজিবাজার থেকে বের হয়ে যাওয়ার ফলে ডিএসইতে লেনদেন ধারাবাহিক কমেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুঁজিবাজারের বড় বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সংগঠন ডিবিএ’র ক্রমাগত চাপের মুখে নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রথম দফায় ৩৫টি কোম্পানি বাদে সবগুলো কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়। এরপর ফ্লোর তোলার চাপে ডিএসইর সূচক খোঁয়া যায় ২৩৯ পয়েন্ট।

সেখান থেকে সাপোর্ট নিয়ে বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। এরপর দেখা যায় ধারাবাহিক উত্থান। এক পর্যায়ে ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর সূচক বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে। এরফলে সূচক এগিয়ে যায় ফ্লোরের অবস্থান থেকে আরও ১১১ পয়েন্ট। তারপর থেকে দেখা দেয় টানা দরপতন। চলতি সপ্তাহের শেষ চার কর্মদিবসে ডিএসই সূচক নেমে যায় ১১১ পয়েন্ট। ফলে ডিএসইর সূচক ফ্লোর তোলার দিন যে অবস্থানে ছিল, আজ সেই অবস্থানে ফিরে গেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, অব্যাহত পতন হওয়ায় বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ কমে গেছে। এতে বুঝা যায়, বাজার এখান থেকেই টার্ন নেবে। আগামী সপ্তাহের শুরতেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা উত্থান হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। এই ১০ কর্মদিবসে সূচকে যোগ হয় ৩৬৮ পয়েন্ট। এই সময়ে অনেক শেয়ারের মূল্যই ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তবে গত চার কার্যদিবসে সূচকের টানা পতনে ১১০ পয়েন্ট সূচকের উধাও হয়ে গেছে। চার কার্যদিবস টানা দরপতনে অধিকাংশ শেয়ারের ২০ শতাংশের বেশি দরপতন হয়েছে।

গত ১৮ জানুয়ারি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট। ফ্লোর প্রত্যাহারের ধাক্কায় সূচক কমেছিল ২৩৯ পয়েন্ট। তারপর সেই ২৩৯ কভার করে সূচক এগিয়েছিল আরও ১১১ পয়েন্ট। আজ অগগ্রস হওয়া ১১১ পয়েন্ট খুঁইয়ে ডিএসইর সূচক ফের ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে এসে থেমেছে।

ডিএসইর তথ্য মতে, ডিএসইর প্রধান প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৫.২৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ৮.৮২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৮২ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ১৫.২৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৫৭ পয়েন্টে।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে ১ হাজার ৭৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আজ ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠানের ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯২টির, কমেছে ২৫০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৪টির।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ ২৫ কোটি ৫১ লাখ ৫ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৪ কোটি ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

আজ সিএসইতে ২৫৪টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬৭টির, কমেছে ১৫৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টি প্রতিষ্ঠানের। আগের দিন সিএসইতে ২৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছিল ৫৬টির, কমেছিল ১৯২টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২১টি প্রতিষ্ঠানের।