শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পুঁজিবাজার যখনই স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসতে শুরু করে তখনই দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারের দৌরাত্ব বেড়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা হচ্ছে না। ফলে বার বার পুঁজিবাজার নিয়ে আস্থাহীনতার ভুগছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। বাজারের এ আস্থাহীনতার পেছনে মুল রহস্য দুর্বল মৌলভিত্তির দৌরাত্বে।

মুলত যেসব কোম্পানির মৌলভিত্তি দুর্বল, শেয়ার সংখ্যা কম, আয় কম এবং ডিভিডেন্ডের রেকর্ড ভালো নয়, সেসব কোম্পানির শেয়ার দর ক্রমেই বাড়তে থাকায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে করে বাজারের স্বাভাবিক গতি বার বার নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি টানা ছয় কার্যদিবস উত্থানের পর বিনিয়োগকারীদের মাঝে বাজার নিয়ে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলেও গত তিন কার্যদিবস নতুন করে দরপতনে হতাশায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। টানা তিন কার্যদিবস দরপতন পুঁজিবাজারে বাড়ছে দুর্বল শেয়ারের রাজত্ব।

এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে বিমা ও প্রকৌশল খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির ফলে বড় দরপতন থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এদিন সূচকের দরপতন ঘটলেও দুর্বল মৌল ভিত্তি অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ভাল মৌল ভিত্তি শেয়ারের দাম কমেছে। কোন কোন দুর্বল মৌল ভিত্তি শেয়ারের দাম ১ মাসের ব্যবধানে ৩ থেকে ৪ গুন বেড়েছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ডিএসই কোন কার্যকর ভুমিকা চেখে পড়ছে না।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারের ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির কমতি নেই। সন্তোষজনক হারে ডিভিডেন্ড ঘোষণা দেয়ার পর এবং বিনিয়োগ অনুকুল পিই রেশিও থাকা সত্বেও কোম্পানিগুলোর দর তলানীতে অবস্থান করছে। অথচ সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ ও দর না বেড়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির দর বৃদ্ধি স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া যায় না। একটি চক্র নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য এসব ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির দর নিয়ন্ত্রন করছে। চক্রটি বিভিন্নভাবে গুজব রটিয়ে এসব শেয়ারের দর বাড়াচ্ছে।

অনেক বিনিয়োগকারী এসব না বঝেই শুধুমাত্র গুজবে নির্ভর করে কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করছে। এর ফলে কোম্পানিগুলোর দর অস্বাভাবিক হারে গেইনার বা টার্নওভার তালিকায় অবস্থান করছে। লোকসান এড়াতে এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকা উচিত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

এদিকে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে টানা তিন কার্যদিবস দরপতনে ফের নতুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা শেয়ার লোকসানে বিক্রি করছেন। আজ ডিএসইতে সূচকের সাথে লেনদেন ৪৭২ কোটি টাকার বেশি কমেছে। এদিন ডিএসইর দর পতনে অধিকাংশ কোম্পানরি শেয়ারদর। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পতনে কমেছে লেনদেন। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএসইর সূত্র মতে, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ডিএসইতে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সোমবার ডিএসইতে ১ হাজার ৬৪৬ কোটি ৪১ লাখ ৮৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। যার ফলে এক কার্যদিবসের ব্যবধানে ডিএসইতে আগের দিন থেকে ৪৭২ কোটি ৮৩ লাখ ১৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন কম হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ২৩.২৭ পয়েন্ট বা ০.৩৬ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৭১.৫৪ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ০.১৯ পয়েন্ট ০.০১ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৯১.০৩ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ০.৮২ পয়েন্ট ০.০৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭২.৩৫ পয়েন্টে। বুধবার ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৯টির, কমেছে ২৭৮টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৮টির।

অপর পুঁজিবাজার সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ৬২.৬৯ পয়েন্ট বা ০.৫৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ১৪.৫৫ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০২.৩১ পয়েন্ট বা ০.৫৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৯৮.০৯ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ৪.০৭ পয়েন্ট বা ০.৩৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৮০.১৯ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ৩৩.০৩ পয়েন্ট বা ০.২৪ শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৫৭০.২৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

আজ সিএসইতে ২৬৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৫৬টির, কমেছে ১৯২টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির। দিন শেষে সিএসইতে ৪৪ কোটি ২২ লাখ ৯৯ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৪ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার।