শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সম্প্রতি দেশের পুঁজিবাজারে রূপকথার আলাদিনের চেরাগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। কোম্পানিটি শেয়ার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। অথচ ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে আস্থা সংকটে বিনিয়োগকারীরা। গত চার মাসের ব্যবধানে ৯ টাকায় শেয়ার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ৫৫ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। দিনশেষে কোম্পানির শেয়ার ৫১ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

এদিকে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের কারখানা বন্ধ পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিদর্শন দল। ডিএসই জানিয়েছে, সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ডিএসইর পরিদর্শন দলটি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের কারখানাটি বন্ধ পেয়েছে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির শেয়ার দর গত কিছুদিন যাবত অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় ডিএসই কোম্পানিটির কাছে একাধিকবার কারণ জানতে চিঠি পাঠায়। কিন্তু কোম্পানিটি ডিএসইর কোনো চিঠিরও জবাব দেয়নি। ফলে ডিএসই বাধ্য হয়ে কারখানাটি পরিদর্শনে যায়। পরিদর্শন গিয়ে দলটি কারখানাটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায়। কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করতে ডিএসই তা প্রকাশ করে।

গত কয়েক বছর ধরে লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড। অথচ কোম্পানিটির শেয়ার দর ছুটছে লাগামহীনভাবে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। শেয়ার দরের এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি চক্রের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। লোকসানের কারণে গত কয়েক বছর ধরে লভ্যাংশ পাচ্ছে না খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের বিনিয়োগকারীরা। অথচ তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির শেয়ার দর ছুটছে লাগামহীন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্র মতে, গত ২৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ জানতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই চিঠি পাঠায়। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি কোম্পানিটি। বাজার বিশ্লেষকদের দাবি, এতে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

ডিএসইর বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত এক মাসে কোম্পানির শেয়ার দর ৯২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত ২ জানুয়ারি শেয়ারটির দর ছিলো ২৬ টাকা। আর গত ৪ ফেব্রুয়ারি শেয়ার দর বেড়ে দাড়িয়েছে ৫৫ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দর বেড়েছে ১০০ শতাংশের মতো।
ডিএসইর তথ্য মতে, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে লেনদেন করছে। কোম্পানিটির মোট ৭ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার শেয়ার রয়েছে। মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার। আর প্রাতিষ্ঠানিক ১ দশমিক ১১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে বাকি ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

গত পাঁচ বছর ধরেই ‘বি’ ক্যাটাগরির খুলনা প্রিন্টিংয়ের লোকসান অব্যাহত রয়েছে। লোকসানে থাকায় গত ৩০ জুন,২০২২ সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এসময় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিলো ৩ টাকা ১০ পয়সা। আর শেয়ার প্রতি সম্পদের মূল্য ছিল ঋণাত্মক (নেগেটিভ) ১ টাকা ৮৬ পয়সা। লোকসানের কারণে ২০২১ সাল থেকে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এর আগে ২০২০ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ০ দশমিক ২৫ শতাংশ নাম মাত্র নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিলো।