শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: কাঁচামাল সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের ব্যবসায় ধস নেমেছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাস জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা কমেছে প্রায় ৪৭ শতাংশ।

জানা গেছে, ব্যবসা কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের যথাযথভাবে লভ্যাংশ দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির মানের অবনতি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন পিএলসি চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, কাঁচামালসংকটের কারণে রাজস্ব এবং মুনাফা উভয় ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এনার্জিপ্যাক পাওয়ারের কোম্পানি সচিব আলাউদ্দিন শিবলী বলেন, ‘এলসি খোলার জটিলতার কারণে চাহিদা মেটাতে আমরা পর্যাপ্ত কাঁচামাল আমদানি করতে পারছি না।’ এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির উৎপাদন কমে গেছে। এতে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আয় কম হয়েছে। এ ছাড়াও বিদ্যুৎ বিল বাবদ সরকারের কাছে সাত মাসের বকেয়া পাওনা রয়েছে। এতে কোম্পানিটি মূলধনের ঘাটতিতে পড়েছে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য লোকসানে থাকা সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে মূল প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠনটি। এর ফলে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা আগামী বছরগুলোতে উন্নত হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দেয়া যাবে।

আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এর প্রথম প্রান্তিকে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের রাজস্ব আয় কমেছে ৬২ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির আগের অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় রাজস্ব কমেছে ৬৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এতে নিট মুনাফা ৪৭ শতাংশ কমে ৯৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিক্রি কমে যাওয়ায় আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির কারণে আগের অর্থবছরের তুলনায় লভ্যাংশ অর্ধেক কমেছে। এতে গত অর্থ বছরে শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছে। একই সঙ্গে ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়ার কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এনার্জিপ্যাকের শেয়ার ‘এ’ ক্যাটাগরি থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছে।

এনার্জিপ্যাক পাওয়ার বুক-বিল্ডিং পদ্ধতির অধীনে প্রাথমিক পাবলিক অফার (আইপিও) এর মাধ্যমে শেয়ার অফলোড করে ২০২১ সালে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত তরলীকৃত পেট্রলিয়াম গ্যাস ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য আইপিওর মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।

এনার্জিপ্যাক পাওয়ারের বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে যেমন স্ট্যান্ডবাই এবং বেস লোড জেনারেটর, জেএসি ব্র্যান্ডের অটোমোবাইল, জন ডিয়ার ব্র্যান্ড অ্যাগ্রো মেশিনারি এবং সরঞ্জাম, জেসিবি ব্র্যান্ডের নির্মাণ যন্ত্রপাতি এবং উপাদান হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম এবং সিএনজি স্টেশন পরিচালনা করে থাকে। তথ্যানুসারে, প্রথম প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৬ পয়সা।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৩৬ পয়সা। আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছিল ৫১ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে এককভাবে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ১৮ পয়সায় (পুনর্মূল্যায়িত)।

কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিক্রি কমে যাওয়ায় আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে। ২০২০-২১ হিসাব বছরের জন্যও শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল ইপিজিএল। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছিল ২ টাকা ৩ পয়সা। এর আগের বছরে যা ছিল ৩ টাকা ৮৩ পয়সা।

২০২১ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৯০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৪৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৯ কোটি ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১৬। এর মধ্যে ৫৪ দশমিক ১৩ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ২৭ দশমিক ৯০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। ডিএসইতে গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৩৪ টাকা ৫০ ও ৪০ টাকা ৩০ পয়সা।