শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় এক মাসের বেশি সময় ধরে নেতিবাচক ধারায় থাকা পুঁজিবাজারে ভোটের পর মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ফলে আস্থা ফিরতে শুরু করছে বিনিয়োগকারীদের। দীর্ঘদিন পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির নিস্কিয় বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে আবার লেনদেনে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। নির্বাচনের পর বাজারের প্রতি এই শ্রেণির মাঝারি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে বলে জানান নেতৃস্থানীয় কিছু ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের শঙ্কা ছিল। বড় ধরনের কোনো সংঘাত, সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা শঙ্কামুক্ত হয়েছেন। ফলে নির্বাচনের আগে যেসব ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নিস্কিয় ছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ এখন সক্রিয় হতে শুরু করেছেন।

তার প্রভাবে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেখা গেছে। তবে নিস্কিয় বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ এখনো অপেক্ষায় রয়েছেন। বাজারের ঊর্ধ্বগতি যদি কয়েক দিন টেকসই হয়, তাহলে তারাও সক্রিয় হবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা করেন।

একাধিক সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ বাজারে সক্রিয় হতে শুরু করলে সূচক ও লেনদেনে গতি ফিরবে। নির্বাচনের আগে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে যে অনাগ্রহ দেখা গিয়েছিল, সেটিতে কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে।

অনেকে বিনিয়োগের জন্য খোঁজখবর নিচ্ছেন। এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়লে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগও বাড়তে শুরু করবে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া দরকার বলেও মনে করেন তাঁরা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, নির্বাচনের পর সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গত সোমবার ডিএসইএক্স সূচকটি ২৫ পয়েন্ট বেড়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতে সূচকের উত্থান হলেও নানা গুজবে দিনশেষে ২ পয়েন্টের সূচক পতন হলেও দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯৫ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৫৪ কোটি টাকা বেশি। এরপর বুধ ও বৃহস্পতিবার সূচকের বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয় ৭৫৩ কোটি টাকার। ডিএসইতে এটি এক মাসের ব্যবধানে সর্বোচ্চ লেনদেন।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেনের শীর্ষ পাঁচ ব্রোকারেজ হাউসের মধ্যে বাকি তিনটি হলো ইবিএল সিকিউরিটিজ, সিটি ব্রোকারেজ ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ। এর মধ্যে ইবিএল সিকিউরিটিজ প্রায় ৭৭ কোটি, সিটি ব্রোকারেজ ও ব্র্যাক ইপিএলে ৬২ কোটি টাকা করে লেনদেন হয়েছে। শীর্ষ পাঁচ ব্রোকারেজ হাউসে এদিন মোট ৪০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে বিক্রির চেয়ে বেশি শেয়ার কেনা হয়েছে ইউসিবি, সিটি ব্রোকারেজ ও ব্র্যাক ইপিএলে।

সিটি ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসবাহ উদ্দিন আফফান ইউসুফ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিশ্রেণির অনেক বিনিয়োগকারী সক্রিয় হয়েছে। বৃহস্পতিবার নতুন করে অনেকে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। বাজার গতিশীল থাকলে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, ছয় মাসের বেশি সময় পর বুধবার তাঁদের প্রতিষ্ঠানটি শতকোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছে। এদিন বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজে। প্রতিষ্ঠানটিতে ৮৯ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কোটি টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি হয়েছে ৪৩ কোটি টাকার শেয়ার।