শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। অন্যদিকে লোকসানি ও উৎপাদনে না থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর আকাশচুম্বী। উৎপাদনে না থাকলেও এসব কোম্পানির শেয়ারদরে এর কোনো প্রভাব নেই। বরং কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (কেপিপিএল)। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটি গ্রাহকদের লভ্যাংশ দিতে একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে। কয়েক বছর লভ্যাংশ দিলেও তার পরিমাণ ছিল খুবই সামান্য। তবে চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে, যা গতকাল বুধবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ২৩০ শতাংশ।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি টাকা। মোট শেয়ার সাত কোটি ৩০ লাখ। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ৩৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

অপর প্রতিষ্ঠান খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের এক বছরের বেশি সময় ধরে উৎপাদনে নেই। রপ্তানিমুখী ব্যাগ তৈরির কারখানা বন্ধ করে ওই কারখানায় এখন ভাড়ায় অন্য কোম্পানির জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করছে। কারখানা বন্ধ থাকলেও বাজারে শেয়ারের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে।

খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ারদর গতকাল পর্যন্ত এক বছরে ৬৭৪ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানিটি টানা চার বছর ধরে লোকসান করছে।এখন পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানি বছরের পর বছর নামমাত্রা লভ্যাংশ দিচ্ছে, সেসব কোম্পানির শেয়ারদরই আকাশ ছুঁয়েছে। কোনো কোনো বছর কোম্পানিগুলো ১ থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ লভ্যাংশ দিচ্ছে।

ফু-ওয়াং সিরামিকের নভেম্বরের ১৬ তারিখ থেকে গতকাল পর্যন্ত দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে নামমাত্র ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। চলতি বছরের ১ অক্টোবর বি ক্যাটাগরির আরেক কোম্পানি বিডি থাইয়ের শেয়ারদর ছিল ১২ টাকা ৮০ পয়সা। গতকাল কোম্পানিটির সর্বশেষ শেয়ারদর ছিল ২৮ টাকা ১০ পয়সা। সে হিসাবে মাত্র ২ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ১১৯ শতাংশ।

অন্যদিকে ভালো কোম্পানির শেয়ারদর আটকে আছে ফ্লোর প্রাইসে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কোম্পানি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেও আটকে আছে ফ্লোর প্রাইসের কাছাকাছি দামে। পুঁজিবাজার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বছর ফ্লোর প্রাইস চালু করার পর বাজারের বেশির ভাগ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস আটকে যায়।

ধীরে ধীরে দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর আকাশচুম্বী হতে থাকে। দুর্বল মৌলভিত্তির শ্যামপুর সুগার মিলস, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এবং লিব্রা ইনফিউশনসের শেয়ারদর চলতি বছরে প্রায় ২২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

অন্যদিকে ভালো মৌলভিত্তির গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) এবং ব্র্যাক ব্যাংকের মতো ভালো কোম্পানি ফ্লোর প্রাইস থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল সূচকটি ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ার পরে বিএসইসি ২০২২ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয়বারের জন্য ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে।

বিএসইসি বলছে, তারা যুদ্ধের কারণে বাজারের পতনকে রোধ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছে। হঠাৎ করে আটকে যাওয়ার আশঙ্কায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থায় বিএসইসি বেশ কয়েকবার বলেছে, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হবে।

২০২৩ সালে যে কয়েকটি ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে এডিএন টেলিকম, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইস্টার্ন হাউজিং, জেনেক্স ইনফোসিস, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির সংখ্যা ২৭টি। জাঙ্ক স্ট্যাটাস এড়াতে কিছু কোম্পানি খুবই নামমাত্র লভ্যাংশ বিতরণ করেছে, যা তাদের আর্থিক বিবরণী সমর্থন করে না। শুধু দর বাড়ার শীর্ষস্থানেই নয় বরং লেনদেনেও দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারগুলো আধিপত্য লক্ষণীয়। গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ২৭ দশমিক ৭৮ শতাংশই সম্পন্ন করেছ অপক্ষাকৃত দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারগুলো।