শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বড় অংকের প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে দেশের নন ব্যাংক বা ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণই এ সংকট। এতে অধিকাংশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় আকারের মূলধন সংকট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় দ্রুত সময়ে এ সমস্যার সমাধানে পরিকল্পনা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রোববার (১৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সাত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের এ বার্তা দেওয়া হয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার পক্ষে। অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে দৃশ্যমান উন্নতি দেখতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দ্রুত নন ব্যাংক বা ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘আর্থিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ চাওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই যাতে মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণ কমে আসে। বৈঠকে সাত প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ কোম্পানির মূলধন সংরক্ষণ পরিকল্পনা জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একই নির্দেশনার আওতায় নিয়ে আসা হবে। তবে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধন সংকট নেই।

এর আগে গত ২৭ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডিদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সভায় জানানো হয় দেশের ৩৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টিতে খেলাপি ঋণ ৩২ শতাংশের বেশি। এ পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় অনুষ্ঠিত ওই সভায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের মতো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও (নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান) অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ হাজার (১৯ হাজার ৯৫১) কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকুত ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ৯৬ কোটি।

জুন প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ স্থিতির পরিমাণ ৭২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। গত মার্চ প্রান্তিক শেষে ঋণ স্থিতি ছিল ৭১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। ওই প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।

গত ২০২২ সালের জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ স্থিতি ছিল ৬৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। গত বছরের ওই সময়ে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ২২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। সে হিসাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা।