৫০ কোম্পানির বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৫০টি কোম্পানির অবণ্টিত লভ্যাংশ যথাযথভাবে বিতরণ করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এটলাস বাংলাদেশ, সিঙ্গার বাংলাদেশ, মুন্নু সিরামিক, কোহিনুর কেমিক্যালস, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), উত্তরা ফাইন্যান্স, ইন্দো বাংলা ফার্মা, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস, জিকিউ বলপেন, কাট্টলি টেক্সটাইল, বাংলাদেশ মনোস্পুল, বারাকা পাওয়ার,
ইবনে সিনা ফার্মা, পূরবী জেনারেল ইনস্যুরেন্স, ইস্টার্ন হাউজিং, বিকন ফার্মা, লিবরা ইনফিউশনস, ওয়াটা কেমিক্যালস, আফতাব অটোমোবাইলস, রেকিট বেনকাইজার, বাংলাদেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স, এক্সিম ব্যাংক, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, রূপালী ইনস্যুরেন্স, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, পদ্মা অয়েল, আরগন ডেনিমস, ইউনাইটেড ইনস্যুরেন্স, ওয়ান ব্যাংক, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, ডেলটা স্পিনার্স, নাভানা সিএনজি,
পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, বিচ হ্যাচারি, শমরিতা হসপিটাল, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, বঙ্গজ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, ম্যাকসন্স স্পিনিং, আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড, গ্রামীণ ওয়ান: স্কিম টু, আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড ও ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এই ৫০টি কোম্পানির ২৮৫ কোটি টাকা নগদ অর্থ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গঠিত বাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলে বা সিএমএসএফে জমা দেওয়ার কথা। এর বাইরে এসব কোম্পানির প্রায় ৩৪ কোটি শেয়ার বা ইউনিট সিএমএসএফে জমা দেওয়ার কথা। এসব শেয়ার বা ইউনিটের বাজারমূল্য প্রায় ৬ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো এসব অর্থ ও শেয়ার বা ইউনিট তহবিলে জমা দিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসি সূত্রে জানায়, উল্লিখিত ৫০টি কোম্পানির এখন পর্যন্ত সিএমএসএফে ১৫০ কোটি টাকা অবণ্টিত ক্যাশ ডিভিডেন্ডের অর্থ ও ২ কোটি ১৫ লাখ শেয়ার বা ইউনিট জমা দিয়েছে। বাকি অর্থ ও শেয়ার বা ইউনিট প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে বিএসইসিকে জানিয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল অর্থ ও শেয়ার বা ইউনিট যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তর করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে ১৩টি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এই বিষয়ে বিএসইসির শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তালিকাভুক্তির পর থেকে বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘোষিত ডিভিডেন্ডের একটি অংশ অবণ্টিত অবস্থায় তাদের কাছে পড়েছিল। অবণ্টিত এসব ডিভিডেন্ডের প্রকৃত দাবিদার বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো দাবিদার খুঁজে না পাওয়ায় অবণ্টিত ডিভিডেন্ড তাদের হিসাবে রেখে দেয়।
এরপর সিএমএসএফ তহবিল গঠনের পর দেখা যাচ্ছে, অনেক প্রতিষ্ঠান দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবণ্টিত ডিভিডেন্ডের বড় অংশ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করেছে বলে দাবি করছে। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দেখা দেওয়ায় এই বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এই নিরীক্ষার আদেশ জারির কথা রয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, উল্লিখিত ৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অবণ্টিত ক্যাশ ডিভিডেন্ড বাবদ বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবির কাছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে অবণ্টিত ক্যাশ ডিভিডেন্ড বাবদ জমা ছিল প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। এরপর অবণ্টিত ক্যাশ ডিভিডেন্ড বাবদ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থ জমা ছিল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে, যার পরিমাণ ২৯ কোটি টাকা। বিএসইসির কাছে কোম্পানিটির যে তথ্য রয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, অবণ্টিত ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পুরো অর্থ এরই মধ্যে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করে দিয়েছে।
অবণ্টিত ক্যাশ ডিভিডেন্ড বাবদ তৃতীয় সর্বোচ্চ অর্থ জমা ছিল অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে, যার পরিমাণ ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কোম্পানিটি যে তথ্য বিএসইসিতে জমা দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, অবণ্টিত ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পুরো অর্থ কোম্পানিটি বিতরণ করেছে। এছাড়া অবণ্টিত ক্যাশ ডিভিডেন্ড বাবদ বিনিয়োগকারীদের পাওনা ২৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা জমা ছিল হাইডেলবার্গ সিমেন্টের কাছে। কোম্পানিটি বিএসইসিকে জানিয়েছে, তারাও এই অর্থ সিএমএসএফ ও বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছে।
এর বাইরে সরকারি কোম্পানি পদ্মা অয়েলের কাছে ১৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, উত্তরা ফাইন্যান্সের কাছে ১৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা, এক্সিম ব্যাংকের কাছে ১২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ও বিকন ফার্মার কাছে ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অবণ্টিত ক্যাশ ডিভিডেন্ড জমা ছিল। কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানিয়েছে, এসব অর্থ তারা বিনিয়োগকারী ও শেয়ারবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলে হস্তান্তর করেছে।
বিএসইসির উদ্যোগে সিএমএসএফ গঠিত হয় ২০২১ সালে। মূলত তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডে পড়ে থাকা বিনিয়োগকারীদের অবণ্টিত ডিভিডেন্ডের অর্থে এ তহবিল গঠন করা হয়। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পাশাপাশি এ অর্থে মিউচুয়াল ফান্ডও গঠন করা হয়েছে।
বিএসইসি যে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবণ্টিত বোনাস ডিভিডেন্ড বাবদ শেয়ার জমা ছিল ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর হাতে। কোম্পানিটির হাতে এমন অবণ্টিত বোনাস শেয়ার ছিল প্রায় আট কোটিরও বেশি। কোম্পানিটি সম্প্রতি বিএসইসিতে যে তথ্য জমা দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, অবণ্টিত সব বোনাস শেয়ার এরই মধ্যে হস্তান্তর করে দিয়েছে কোম্পানিটি।
এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি অবণ্টিত বোনাস শেয়ার ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত আইসিবির কাছে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফসির হাতে ছিল প্রায় সাড়ে চার কোটি শেয়ার। এরপর দুই কোটি অবণ্টিত বোনাস শেয়ার ছিল ইন্দো বাংলা ফার্মার কাছে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, প্রথম পর্যায়ে ৫০টি কোম্পানির অবণ্টিত ডিভিডেন্ড বিতরণসংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য বেশ কয়েকটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। পর্যায়ক্রমে বাকি কোম্পানিগুলোকেও নিরীক্ষার আওতায় আনা হবে।