শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে পুঁজিবাজার হাঁটছে উল্টো পথে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপের পর ও টানা দরপতনে পুঁজিবাজার। বরং দিন যতই যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার মুখের কথায় ফুলঝুঁড়ি থাকলেও বাস্তবে বাজারে উল্টো চিত্র।

টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ছেড়েছেন এই বাজার। লেনদেন কমায় বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে লোকসানে। নতুন কোম্পানির পুঁজি সংগ্রহের পথও সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসে সৃষ্ট সংকটকালের পর গত ১৩ বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে নাজুক দশা পুঁজিবাজারের।

একাধিক বিনিয়াগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের ভূত ভর করেছে। একটার পর একটা ইস্যু কাজ পুঁজি করে টানা দরপতন হচ্ছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপর আস্থার অভাবে বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকার শেয়ার বিক্রি করে সাইডলাইনে অবস্থান করেছেন। ফলে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনে ধস নেমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের বর্তমান দুরবস্থার প্রধান কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। আর এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সুশাসন, প্রয়োজনীয় নজরদারি ও অপরাধীর যথাযথ শাস্তির অভাবে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এমনটি হতো না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দীর্ঘ এক যুগ ধরে বারবার সময় নির্ধারণ করেও রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ বাজারে গতি আনতে এসব ছিল সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তবে উল্টো মানহীন কোম্পানির আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) এনে বাজারকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

এছাড়া বর্তমান পুঁজিবাজারে নানা গুজবে টালমাতাল অবস্থা। আগামী সপ্তাহে ব্যবসায়ীসহ আরও বেশ কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেজ্ঞায় দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র’ এমন খবরে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। ক্রেতাশূন্য পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ২৪ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ৫৪ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেনও। এ দিন ১৩৪টি কোম্পানির শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বন্ডের দাম কমার বিপরীতে বেড়েছে মাত্র ১৪টি কোম্পানির। অপরিবর্তিত ছিল ১৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসরাইল ও হামাসের যুদ্ধ এবং আগামী সপ্তাহে ব্যবসায়ীসহ আরও বেশ কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেজ্ঞায় দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এমন খবরে পুঁজিবাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে নতুন বিনিয়োগ না করে শেয়ার বিক্রির টাকা তুলে নিচ্ছে। ফলে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। কমেছে লেনদেন, সূচক ও বিনিয়োগকারীদের পুঁজি।

গত ৭ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে খবর ছাপা হয়েছে যে, ‘আসছে মার্কিনি ঝড়’। আগামী সাত দিনের মধ্যে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এক বিপজ্জনক অর্থনৈতিক ঘূর্ণিবার্তার ঝাপটা আসার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এই ঝাপটা আসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা অর্থনৈতিক মহল থেকে। এ ব্যাপারে পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক মোড়লরা এখন কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে।

ডিএসইর দেওয়া তথ্য মতে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৩৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক ৪ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫১ পয়েন্টে। ডিএস-৩০ সূচক ৬ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩০ পয়েন্টে।

এদিন বাজারে লেনদেন হওয়া ২৯৭টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪টির। বিপরীতে কমেছে ১৩৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। বাজারে ৮ কোটি ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৯০০টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে ৩৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৩৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

এদিন পুুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৫৪.২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৭৭.৬৬ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ৩২.৭৫ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২৪.৬৭ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ১.৩৯ পয়েন্ট এবং সিএসআই ৩.১৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ৪৬.৪১ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৩০.৪০ পয়েন্টে, একহাজার ৩০৪.৮৫ পয়েন্টে এবং একহাজার ১৬২.৫০ পয়েন্টে।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সিএসইতে ১২৪টি প্রতিষ্ঠানে লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮টির, কমেছে ৭৯টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের। সিএসইতে ১৬ কোটি ১৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।