শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: আমানত, তারল্য, মুনাফা, নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সংকটের মধ্যে রয়েছে দেশের অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি এই সংকট আরও বেড়েছে। দিন যত যাচ্ছে অব্যাংকিং আর্থিকখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংকট তত বাড়ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, এখন সিংহভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দশা খুবই করুণ।

কিছু প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আর্থিকখাতের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। এখন খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত। মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। যে কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) শেয়ারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ার কিনতে খুব বেশি আগ্রহ দেখান না তারা। এছাড়া দিনের পর দিন এ খাতের কোম্পানিগুলোর লোকসানের পরিমান বাড়তে থাকায় আগ্রহ হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

ফলে বিনিয়োগকারীদেও কাছে মরন ফাঁদ আর্থিক খাতের শেয়ার। কারণ সম্প্রতি আর্থিক খাতের প্রায় ১০ কোম্পানি নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। এসব কোম্পানিগুলো বছরের পর বছর নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। ফলে বছর শেষে বিনিয়োগকারীরা কিছু মুনাফা পাবে সে আশায় গুড়োবালি।

এছাড়া, বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের মূল আকর্ষণ থাকে কারসাজির প্রতি। তবে আর্থিক খাতের শেয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ায় কারসাজির সুযোগ তেমন নেই। তাই এসব শেয়ার কিনতে চান না তারা। ফলে ক্রেতা সংকটের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে ১০টি আর্থিক খাতের শেয়ারের দাম ১০ টাকার নিচে আছে। অথচ একসময় ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল।

বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা বলেন, আমরা যদি হিসাব করি তাহলে দেখা যাবে, ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের প্রকৃত সম্পদ মূল্য কম। তাই তাদের শেয়ারের দামও কম থাকে।অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের ডিন। তিনি পুঁজিবাজার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুঁজিবাজার নিয়ে তার বেশ কিছু প্রকাশনা আছে। ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সম্পদ মূল দুটি কারণে কম, একটি হলো উচ্চ খেলাপি ঋণে জর্জরিত ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ আয় করতে পারে না। অন্যটি হলো, বিনিয়োগকারীরা মনে করেন- ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রভিশন রাখছে না, এজন্য তাদের আয় ভবিষ্যতে কমে যেতে পারে,’ বলেন তিনি।

ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শেখ মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান বলেন, ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলো অন্য কোম্পানির চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রিত, তাই বিনিয়োগকারীদের তাদের প্রতি আরও আস্থা রাখা উচিত ছিল।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রে ব্যাংকিং খাতের বিশ্লেষণ প্রকাশিত হচ্ছে। সেসব বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক কঠিন সময় পার করছে। তাই এ খাতের সম্পদের তথ্য সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না বিনিয়োগকারীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি তালিকাভুক্ত ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কিছু ব্যাংক ও এনবিএফআই উচ্চ খেলাপি ঋণের চাপে আছে। কিন্তু তারা কিছু করপোরেট গভর্নেন্স মেনে চলছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মের মধ্যে আছে।

তিনি আরও বলেন, কিছু ব্যাংক ও এনবিএফআই লভ্যাংশও দিচ্ছে। তাই বলা যায় কিছু ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানকে অবমূল্যায়ন করা হয়, কারণ বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী গুজবে কান দেয়। এছাড়া ব্যাংক ও এনবিএফআইয়ের শেয়ারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় কারসাজি করা কঠিন।