শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সব সূচকে এগিয়ে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। আয়, মুনাফা, সম্পদ সবকিছুতেই প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করা প্রতিষ্ঠানটি। দায়ের পরিমাণও প্রধান প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশ কম।

মুনাফার প্রবৃদ্ধিতেও রয়েছে বেশ ধারাবাহিকতা। তবে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান প্রতিযোগী রেটেনা ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। তবে এই দুই কোম্পানি সম্মিলিতভাবে বছরে যে মুনাফা করে তার প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা হয় স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের। এমনকি প্রধান চার প্রতিযোগীর সম্মিলিত মুনাফার চেয়েও স্কয়ারের মুনাফা বেশি।

ফলে ধারাবাহিক কোম্পানিটির মুনাফা যেমন বাড়ছে তেমনি লভ্যাংশের পরিমান বাড়ছে। যার ফলে কোম্পানি দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের উপযোগী। এ কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে চলে।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটি ১ হাজার ১৫৯ কোটি ৩৯ লাখ ৬ হাজার টাকা মুনাফা করে ঐ বছর ১৫.৭২ পয়সা ইপিএস ঘোষণা করে। ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোম্পানিটি ৩৬ শতাংশ নগদ ও ৭ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে কোম্পানিটির ১ হাজার ২৬৪ কোটি ৫৭ লাখ ২ হাজার টাকা মুনাফা করে ঐ বছর ১৬.০৩ পয়সা ইপিএস ঘোষণা করে। ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোম্পানিটি ৪২ শতাংশ নগদ ও ৭ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছিল।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কোম্পানিটির ১ হাজার ৩৩৫ কোটি ৪৪ লাখ ১ হাজার টাকা মুনাফা করে ঐ বছর ১৫.৮২ পয়সা ইপিএস ঘোষণা করে। ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪৭ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়। তবে ২০২০ সালে কোম্পানিটি মুনাফার তুলনায় ইপিএস একটু কম ঘোষণা করে।

২০২০-২০২১ অর্থবছরে কোম্পানিটির ১ হাজার ৫৯৪ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার টাকা মুনাফা করে ঐ বছর ১৭.৯৯ পয়সা ইপিএস ঘোষণা করে। ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৬০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে কোম্পানিটির ১ হাজার ৮১৭ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার টাকা মুনাফা করে ঐ বছর ২০.৫১ পয়সা ইপিএস ঘোষণা করে। ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়।

কোম্পানিটি গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে একদিকে যেমন মুনাফা বাড়ছে, অন্যদিকে লভ্যাংশ বাড়ছে। যার ফলে দিন দিন স্কয়ার ফার্মার প্রতি বিনিয়োগকারীদের একটু বাড়তি আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরেই স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের নগদ অর্থের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ৩১ মার্চ শেষে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরে কোম্পানিটির কাছে ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকার নগদ অর্থ ছিল।

২০১৫-১৬ হিসাব বছরে কোম্পানিটির নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে এর পরিমাণ বেড়ে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এটি আরো বেড়ে ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে ১ হাজার ৬৯৮ কোটি, ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে ২ হাজার ৭০০ কোটি এবং ২০১৯-২০ হিসাব বছরে ৩ হাজার ২৫৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।

সম্প্রতি স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস পিএলসির সাথে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে এরিস্টোফার্মা লিমিটেড। এ চুক্তির আওতায় স্কয়ারের বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ উৎপাদন করবে অ্যারিস্টোফার্মা। স্কয়ার ফার্মার পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ চুক্তির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে জানানো হয়, ওষুধগুলোর বাড়তি চাহিদা থাকায় স্কয়ার ফার্মার উৎপাদন সক্ষমতা দিয়ে মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া ওষুধের চাহিদা একটি পর্যায়ে না গেলে নতুন ইউনিট স্থাপন করাটাও লাভজনক হবে না। এ কারণে সেফালোস্পোরিন গ্রুপের পাঁচটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ উৎপাদনের জন্য এ কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং চুক্তি করা হয়েছে।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুাসরে, সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের নিট আয় হয়েছে ৪ হাজার ৮১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪ হাজার ৩৭২ কোটি ২২ লাখ টাকা। তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৪৯০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ হাজার ৪২১ কোটি ৫ লাখ টাকা।

আর চলতি হিসাব বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কোম্পানিটির নিট আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৫৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

বাজার বিশ্লেষক ও বাংলাদেশের প্রথম প্রাইভেট অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি এইমস অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইয়াওয়ার সায়ীদ বলেন, নিঃসন্দেহে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস একটি ভালো কোম্পানি। তাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কোম্পানিটির মুনাফা ও ব্যবসার প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো। ফলে কেউ বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার ঝুঁকি নেই। সূত্র: দেশ প্রতিক্ষণ