শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ছোট মূলধনি ও পুঞ্জীভূত লোকসানি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। মুলত দুর্বল, অচল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের ফাঁদে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এছাড়া কিছু কোম্পানি আছে উৎপাদন সীমিত কিংবা একেবারেই উৎপাদনে নেই, অথচ শেয়ারদর বেশ চাঙা। আবার লোকসানে ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত এমন কোম্পানিও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুঁজিবাজারে। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক এবং পুঁজিবাজারের জন্য শুভ নয় বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।

উৎপাদন বন্ধ অথচ পুঁজিবাজারে শক্তিশালী এমন ১২টি কোম্পানির হালনাগাদ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং লেনদেন পর্যালোচনা করেছে শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম। এতে দেখা যায়, কোনোটির উৎপাদন নেই, অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে শেয়ারের দাম। কোম্পানিগুলো হলো: মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, মেঘনা পেট, ওয়াইম্যাক্স, ইমাম বাটন, সুহ্রদ ইন্ডাস্টিজ, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, আরামিট সিমেন্ট, জুট স্পিনার্স, লিগ্যাসি ফুটওয়ার, জিলবাংলা, শ্যামপুর সুগার মিল এবং বিডি ওয়েলডিং।

লিগ্যাসি ফুটওয়ার: ধারাবাহিকভাবে ব্যবসা পতন ও লোকসান এবং বিনিয়োগকারীরা বছরের পর বছর আশানুরূপ লভ্যাংশ না পেলেও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ট্যানারি খাতের কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়ারের শেয়ারদর। কোম্পানির ব্যবসা লোকসানে থাকলেও গত ছয় মাসে শেয়ারটির দর কারসাজির মাধ্যমে ১৪০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে।

এতে গত দুই বছরের মধ্যে শেয়ারটির দর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। অথচ এর আগে একাধিকবার শেয়ারটিতে কারসাজির কারণে জরিমানা করা হয়েছে। সেই পুরোনো কারসাজি চক্রের একটি অংশ আবার কারসাজি করে শেয়ারদর এ পর্যন্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধিতে কোম্পানির নতুন শেয়ার ইস্যু কেন্দ্র করে মূলত এই কারসাজি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে যাদের কাছে শেয়ারটি রয়েছে এবং যারা কারসাজি করছে, তারা শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে মুনাফা করবে। এ বিষয়ে কোম্পানির পর্ষদ, উদ্যোক্তা এবং কর্মকর্তারা সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে জানা যায়।

সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ: উৎপাদন বন্ধ। শেয়ারহোল্ডারদের ঘোষিত লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ এমনিতে ঋণগ্রস্ত। পর্ষদের কেউ বলতে পারছেন না কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ কী হবে? কোম্পানির উদ্যোক্তাদের বিরোধ, দখল-পাল্টা দখল, সীমাহীন লুটপাট, উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়া, খেলাপী ঋণের দায়ে কোম্পানির জায়গা-জমি ও কারখানা বিক্রির জন্য নিলাম আহ্বানসহ নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে কোম্পানিটি বাজারের জন্য শত্রুতে পরিণত হয়েছে।

আর্থিক সঙ্গতি না থাকা সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে লভ্যাংশ ঘোষণার এবং ঘোষিত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ না করায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ইমাম বাটন: দীর্ঘ ৩ বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ইমাম বাটনের। ‘জেড’ ক্যাটাগরির ইমাম বাটন ধারাবাহিকভাবে লোকসান করে যাচ্ছে। লোকসান কাটাতে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগও । তবু কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। সম্প্রতি তুরুপের তাস হিসাবে ব্যবহার করার জন্য কোম্পানিটি জানিয়েছে, বরগুনার আমতলীতে ১ কোটি টাকায় একটি এগ্রো প্রকল্প লিজ নিয়েছে। খবরটি একেবারেই নস্যি। তারপরও তা ফলাও করে প্রচার করার প্রাণপন চেষ্টা করেছে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানিটি বন্ধ থাকলেও এর শেয়ার নিয়ে বছরজুড়ে চলছে কারসাজি। গত ২০২২ সালের জুলাই মাসে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজি খতিয়ে দেখতে বিএসইসি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজও আলোর মুখ দেখেনি। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১০ সালে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

তারপর থেকেই ধারাবাহিক লোকসানে থাকে কোম্পানিটি। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি সর্বশেষ বিনিয়োগকারীদের আর্থিক প্রতিবেদন জানিয়েছে। সে বছর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৪০ পয়সা এবং রিজার্ভ ছিল নেগেটিভ ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। তারপর থেকে কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত রয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসান আগের চেয়ে অনেক বেশি। যা প্রকাশ করলে শেয়ারটি কারসাজি করা দুস্কর হবে। কারসাজিকারীদের সুবিধা দিতেই কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছেন।

শ্যামপুর সুগার: শ্যামপুর সুগারের ২০২২-২৩ অর্থবছরের তিন প্রান্তিক শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪১.৭৭ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ ও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করছে বছরের পর বছর। অথচ বছরের বেশিরভাগ সময় এ কোম্পানিটি শেয়ারের দরবৃদ্ধির দাপট চলছে। বর্তমানে শেয়ারটি ১০৬ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।

জিলবাংলা সুগার: জিলবাংলা সুগারের উৎপাদন বন্ধ। জিলবাংলা সুগারের ২০২২-২৩ অর্থবছরের তিন প্রান্তিক বা ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি লোকসান ৫২ টাকা ৪৭ পয়সা। লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত বিনিয়োগকারীরা। অথচ বছরের বেশিরভাগ সময় এ কোম্পানিটির শেয়ারও দরবৃদ্ধির দাপট দেখাচ্ছে। বর্তমানে শেয়ারটির দর ১২২.৫০ টাকার লেনদেন হচ্ছে। এরপর কোনো কারণ ছাড়াই টানা দর বাড়তে থাকে।

মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক : মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক তালিকাভুক্তির পর থেকেই লোকসানে রয়েছে। লোকসান থেকে কখনও বের হতে পারেনি। কোনো বছর লোকসান বাড়ছে, কোনো বছর কমছে। কিন্তু লোকসানের আবর্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এর শেয়ারপ্রতি লোকসান ১.৫৮ টাকা।

মেঘনা পিইটি: একই অবস্থা মেঘনা পিইটির। কোম্পানিটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের তিন প্রান্তিক শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০.১৭ টাকা। পুঁজিবাজারে আসার পর কখনও লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তারপরও কোম্পানিটির শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখী।

মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজ: দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজের। বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করছে লভ্যাংশ থেকে। অথচ শেয়ারদর বাড়ানোর জন্য মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজের নতুন পরিচালনা পর্ষদ মালিকানা পরিবর্তন ও উৎপাদন শুরু করার খবর ফলাও করে প্রচার করেছে। কিন্তু কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়ে যাওয়ায় তা প্রকাশ করেনি। কারণ লোকসানের পাল্লা ভারির খবর প্রচার হলে শেয়ার দরে কারসাজি করা দুরুহ হয়ে পড়বে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ অবশ্যই কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা হিসাব করে বুঝে নিয়েছেন। আর্থিক অবস্থার হিসাব ছাড়া কোনোভাবেই কোম্পানিটি হস্তান্তর হয়নি। তাহলে কেন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো না। আর্থিক প্রতিবেদন ভালো নয় বলেই কারসাজির স্বার্থে তা প্রকাশ করা হয়নি, এমনটাই অভিযোগ করছেন তাঁরা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালে মিরাকল ইন্ডাষ্ট্রিজ বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। সেই বছর কোম্পানিটির লোকসান ছিল শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ৬২ পয়সা। তারপর থেকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ এবং বিনিয়োগকারীদের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে অন্ধকারে রেখেছে। এক শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়ে শেয়ারটি কারসাজিকারিদের তুরুপের তাস হিসাবে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছিল। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির মালিকানা পরিবর্তন ও উৎপাদনে ফেরার খবর স্টক এক্সচেঞ্জে এসেছে। কিন্তু তার আগে থেকেই কোম্পানিটির লোকজনের সঙ্গে একটি দুষ্টু চক্র শেয়ারটি নিয়ে কারসাজি শুরু করছে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কারসাজির উদ্দেশ্যে কোম্পানিটির মালিকানা পরিবর্তন ও উৎপাদনের ফেরার খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে; কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক প্রতিবেদন জানানো হয়নি। যদিও মালিকানা পরিবর্তনের সঙ্গে কোম্পানির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। উল্লেখ্য, কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বা বিদেশি কোনো বিনিয়োগ নেই। উদ্যোক্তা পরিচালকদের রয়েছে ৩০ শতাংশ শেয়ার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদর কাছে রয়েছে বাকি ৭০ শতাংশ।

আরামিট সিমেন্ট: আরামিট সিমেন্ট উৎপাদন বন্ধ। কোম্পানিটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৬৬ পয়সা। তারপরও শেয়ারটির দর অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। শেয়ারটি অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কোম্পানিটিতে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে।

ডিএসই সূত্র জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২২ টাকায়। যা ২৪ আগস্ট লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ৮০ পয়সায়। অর্থাৎ ৬ কর্মদিবসে লোকসানী কোম্পানিটির শেয়ারটির দর বেড়েছে ৬ টাকা ৮০ পয়সা বা ৩১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২২ সালে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

ওই বছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১৬ টাকা ৮৮ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বা তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২২-মার্চ’২৩) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১১ টাকা ৬৬ পয়সা।

কোম্পানিটি ১৯৯৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে অবস্থান করছে। তাদের ৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৩৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সিমেন্ট খাতের প্রতিষ্ঠানটির রিজার্ভে রয়েছে ২৯ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট তিন কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার রয়েছে। মোট শেয়ারের মধ্যে ৪৫ দশমিক ৯২ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের, প্রাতিষ্ঠানিক ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৪৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

জুট স্পিনার্স: দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ, নতুন করে উৎপাদনে ফেরার কোনো খবরও নেই। অর্ধযুগ ধরে করতে পারেনি বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। এক দশক ধরে শেয়ারহোল্ডারদের দিচ্ছে না কোনো লভ্যাংশ। রয়েছে ঋণের ভার। ‘জুট স্পিনার্স লিমিটেড’ নামে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সেই কোম্পানির শেয়ারের দাম বর্তমানে ৩৫৩ টাকার বেশি। সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজি খতিয়ে দেখতে বিএসইসি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আজও আলোর মুখ দেখেনি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ছে আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা লাভের আসায় মরীচিকার পেছনে ছুটে নিজের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। মূলত কারসাজি আর সিন্ডিকেটের কারণে এসব শেয়ারের দর বাড়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তদন্ত করে এ ধরনের কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া।

এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ, অল্প সময়ে বেশি ক্যাপিটাল গেইন বা মুনাফার লোভে বিনিয়োগকারীরা দুর্বল ও উৎপাদন বন্ধ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন বেশি। কারণ এসব শেয়ারের দর সহজে গ্যাম্বলিং (কারসাজি) করে বাড়ানো যায়। মুলত লোকসানি কোম্পানির দাম বাড়ে, এটা জুয়া খেলা। জুয়াড়িরা সিন্ডিকেট ট্রেডিং করে। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করে তিনি বলেন, অকারণ মূল্যবৃদ্ধি বিএসইসি ঠেকাতে পারত। ওদের ট্রেডিং সাসপেন্ড করা উচিত; কিন্তু করা হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘কারণ ছাড়া যখন তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির দর বৃদ্ধি পায় তখন ঝুঁকির সৃষ্টি করে। এতে বিনিয়োগকারীরা লোকসানের কবলে পড়তে পারেন। যদিও এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে কেউ কেউ স্বল্প সময়ে অধিক লাভ করে থাকে। তবে এর পরিমাণ সীমিত। এখানে লাভের চেয়ে লোকসানের শঙ্কাই বেশি।’

অস্বাভাবিক শেয়ারদর বাড়ার কারণের বিষয়ে একাধিক কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষ বলছে, শেয়ারদর বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোকে ঘিরে কারসাজির প্রবণতা বেশি থাকে। কারণ কোম্পানিগুলোর মূলধন কম। ফলে মাঝেমধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে। গুজব ছড়িয়ে কারসাজি চক্র শেয়ারের দাম বাড়িয়ে দেয়। কারসাজি চক্রের ফায়দা হাসিল হয়ে গেলে তারা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যায়।