ডিএসই’র ওএমএসে পোস্টট্রেড ত্রুটি বিএসইসির কমিটি গঠন
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সেন্ট্রালাইজড অপারেটিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (ওএমএস) গত ৬ আগস্ট পোস্টট্রেড কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। এ বিষয়ে সার্বিক দিক তদন্ত ও অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তথ্য মতে, কারিগরি ত্রুটির কারণে ডিএসইর সেন্ট্রালাইজড ওএমএস-এ গত ৬ আগস্ট পোস্ট-ট্রেড প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন দেখা দেয়। কমিশন সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সার্বিক দিক বিবেচনা করে কমিশন সার্ভিল্যান্স বিভাগের পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমান, এমআইএস বিভাগের পরিচালক রাজিব আহমেদ, এসআরআইসি বিভাগের একজন কর্মকর্তা এবং পরিদর্শন, তদন্ত ও অনুসন্ধান বিভাগের একজন কর্মকর্তা সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
কমিটি অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে ডিএসইর সেন্ট্রালাইজড ওএমএস ও ম্যাচিং ইঞ্জিনের এরোর গিলিচ এবং সর্বোপরি বিভিন্ন সময়ে টেকনিক্যাল ফেইলর সম্পর্কিত বিষয়সমূহ চিহ্নিত করবে। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের সুনির্দিষ্ট দায় আছে কিনা তা নির্ধারণ করবে এবং তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিষয়ের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রদান করবে। এ বিষয়ে এসএমএমআই বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ৬ আগস্ট ট্রেডিং শেষে শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি করতে প্রায় ১২ ঘণ্টা সময় নেয় ডিএসই। এ সমস্যার কারণ জানতে প্রাথমিকভাবে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে একটি কমিটি গঠন করে বিএসইসি। অপরটি করে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ।
বিএসইসি’র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলামকে। অন্যদিকে, ডিএসইর পক্ষ থেকে গঠিত কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থাটির পরিচালক রুবাবা দৌলাকে। এ ছাড়া, কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির একজনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
সেদিন লেনদেন শেষে শেয়ার কেনাবেচা সংক্রান্ত আদেশের স্বয়ংক্রিয় ডেটা তৈরির ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দেয়। এতে কিছু প্রতিষ্ঠানের ডেটা ফাইল ভেঙে যায়। সে কারণে সেসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেন নিষ্পত্তিতে জটিলতা তৈরি হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি করা হলেও এই কারিগরি ত্রুটির কারণে পর দিন সোমবার ভোর ৩টা পর্যন্ত ডিএসই এসব ব্রোকারেজের লেনদেন নিষ্পত্তি করতে পারেনি। ৬ আগস্ট নির্ধারিত সময়ে লেনদেন নিষ্পত্তি হয়নি ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের। কারও কারও সারা রাত অফিসে কাটাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
এদিকে, ৭ আগস্ট কিছু ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেড রিপোর্ট ডাউনলোডে সমস্যা প্রসঙ্গে ডিএসই জানিয়েছে, ডিএসইতে ট্রেডিং নির্বিঘ্নভাবে বেলা ২টা ৩০ মিনিটে শেষ হয়৷ ট্রেড সমাপ্ত হওয়ার পর ব্রোকার হাউজগুলো তাদের ট্রেড ডাটা অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ফ্লেক ট্রেডের মাধ্যমে ডাউনলোড করে এবং এর মাধ্যমে তাদের ক্লিয়ারিংসহ সেটেলমেন্ট সংক্রান্ত কাজগুলো সিডিবিএল ও ব্যাক অফিসের মাধ্যমে সুসম্পন্ন করে।
এরপর প্রত্যেক ব্রোকার হাউজ তাদের পরবর্তী দিনের ট্রেড কার্যক্রমের জন্য তাদের প্রতিটি ক্লায়েন্টের শেয়ার এবং ক্যাশ ব্যালেন্সের তথ্য অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ফ্লেক ট্রেডে আপলোড করে। কিন্তু, রোববার ট্রেড সম্পন্ন হওয়ার পর টেকনোলজি প্রোভাইডার ফ্লেক্সট্রেডের কারিগরি ত্রুটির কারণে ৬৩ জন ব্রোকার হাউজ ফ্লেক ট্রেড সফটওয়্যার থেকে তাদের ট্রেড সংক্রান্ত ডাটা ডাউনলোড করতে না পারায় তাদের ট্রেড সেটেলমেন্ট সংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইসিটি টিম, ম্যানেজমেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার ভেন্ডর দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। ওই দিন রাত থেকে পরের দিন ট্রেড শুরুর আগেই সমস্ত ব্রোকার হাউজের সমস্যার সমাধান হয় এবং সবাই আজ তাদের ট্রেডিং কার্যক্রমে সফলভাবে অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে এই ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ডিএসই কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার ভেন্ডর ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে৷