শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: গুজব নির্ভর পুঁজিবাজারে এবার নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঢুকেছে নানান ধরনের ভয় ও শঙ্কা। এ শঙ্কায় আস্থা হারিয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা রয়েছে বাজার পর্যবেক্ষণে।

বাজারে এ অবস্থা চলছে গত এক মাস (২০ জুলাই-২০ আগস্ট) ধরে। এই সময়ে বাজারে মাত্র সাত দিন উত্থানের বিপরীতে ১৩ কর্মদিবস পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। তাতে বিনিয়োগকারীদের মূলধন অর্থাৎ পুঁজি হাওয়া হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। লেনদেনও কমতে কমতে ঠেকেছে তলানিতে।

লংকা বাংলা সিকিউরিটিজের মতিঝিল শাখার কর্মকর্তা কাদের নাবিল বলেন, গত এক মাস বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি বেড়েছে। বিশেষ করে আগস্ট মাস থেকে বিক্রির ধুম পড়েছে। বাজারের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা। এটি হয়েছে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনের সময়ে পুঁজিবাজারকে ভালো রাখতে বিশেষ ছক তৈরি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ইনভেস্টমেনন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইতোমধ্যে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী দিনের কর্মপরিকল্পানা তৈরি করেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন কারণে পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হয়ে লেনদেন তলানিতে ঠেকেছে। এর প্রধানতম কারণ হলো- আগামী নির্বাচন। আসছে জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে উত্তপ্ত রাজনৈতিক মাঠ। সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে যেতে পারে। এতে করে পুঁজিবাজারে আরও দরপতন হতে পারে এই ভয় ও শঙ্কায় দিন পার করছে বিনিয়োগকারীরা। তাই তারা শেয়ার বিক্রি করে নিজের অর্থ তুলে নিচ্ছেন। ফলে একদিন সূচক সামান্য বাড়লে দুদিন কমছে।

দ্বিতীয়ত, বাজারে চলছে নানা গুজব। যেমন- আইসিবি ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তন হচ্ছে। এসব গুজবের পর এবার গুজব ছড়ানো হয়েছে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করছেন। এসব কথা বলে বাজার অস্থিতিশীল করছে একটি গ্রুপ। তাতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

তৃতীয়ত, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি। এই ইস্যুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এই তিন কারণে বিনিয়োগকারীরা আস্থাহীন হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। বাজারে প্রাণ বলে খ্যাত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের সক্রিয় করা, ভালো ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করে পুঁজিবাজারে গভীরতা বাড়ানো, বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবহিতা নিশ্চিত করা এবং কারসাজি চক্রকে চিহ্নিত করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ জানিয়েছে তারা।