শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। তবে টানা সূচকের দরপতনে বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা। মুলত টানা দরপতনের পেছনে মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ থেকে ‘উৎসে কর’ কাটা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নানা গুজবে টালমাতাল অবস্থা বিরাজ করছে পুঁজিবাজারে। ফলে পুঁজিবাজারের দরপতনের গন্তব্য কোথায় এ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা রয়েছে আতঙ্কে।

জানা গেছে, চলতি মাসের (আগস্ট) শুরু থেকে দেশের শেয়ারবাজারে সূচক বেশিরভাগ সময়ই কমেছে। ২ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত শেয়ারবাজারে কার্যদিবস ছিল ৯ দিন। এর মধ্যে ৬ দিনই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে। এ ৬ দিনের পতনে ‘ডিএসই এক্স’ সূচক ৮৫ পয়েন্ট হারিয়েছে।

সম্প্রতি পাঁচ কার্যদিবসের দরপতনে নতুন করে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে। এছাড়া ঋণ নেওয়া অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ইক্যুইটি মাইনাস হয়ে গেছে। এ অবস্থায় হাউজ থেকে ফোর্স সেলের ভয় ভীতি দেখাচ্ছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না।

এছাড়া পুঁজিবাজারকে যখনই একটু একটু করে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, ঠিক তখনই একটি চক্র বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীলতার চেষ্টা করছে। ঠিক একইভাবে গত কয়েকদিন ধরেই দেশের পুঁজিবাজারে একটি চক্র গুজব ছড়িয়েছে। যার কারণে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে হাতে থাকা শেয়ার লোকসানে বিক্রির করছেন।

ফলে বাজারে সেল প্রেসার বেড়ে যাওয়ায় সূচকের বড় দরপতন ঘটছে। বিষয়টি নজরে এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফলে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষে দেশের সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফান্ড ম্যানেজারদের সাথে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ নানা গুজবে কান দিয়ে শেয়ার বিক্রি করছে। তারা মনে করছে, বাজারে আরও দরপতন হবে। এই আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে শেয়ার ক্রয়ের চেয়ে বিক্রি চাপ বেশি থাকায় দরপতন অব্যাহত রয়েছে।

এই বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজারে নানা ইস্যু ছড়িয়ে একটি চক্র বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। তবে বিএসইসি সেই চক্রকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। বিএসইসির আইটি টিম বিষয়টি জোড়ালোভাবে কাজ করছে। গুজব রটানো চক্রকে চিহ্নিত করে বিএসইসি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, বুধবার মাত্র ১৬ কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৪৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। অর্থাৎ পনেরো গুণেরও বেশি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। আর দরপতন থেকে ধসের দিকে ধাবিত হয়েছে পুঁজিবাজার। সোমবারও পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছিল। এ দুই দিনে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।

ডিএসইর তথ্যমতে, আজ বাজারে ৩০১টি প্রতিষ্ঠানের মোট ৬ কোটি ৫৫ লাখ ১২ হাজার ৬৫৮ শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। এতে লেনদেন হয়েছে ৩৫১ কোটি ৫৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪১৩ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে।

আজ ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩৫১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৪১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। ডিএসইতে আজ ৩০১টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৬টির বা ৫.৩২ শতাংশের। এছাড়া দর কমেছে ১৪৬টির বা ৪৮.৫১ শতাংশের এবং শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩৯টির বা ৪৬.১৮ শতাংশের।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৭.৩৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৩৫.৯৮ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলো মধ্যে সিএসসিএক্স ৪০.৬২ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ৩.৪১ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৭.১২ পয়েন্ট এবং সিএসআই ১.৯২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ০২০.৫০ পয়েন্টে, এক হাজার ২৯৯.৪২ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ২৭৭.১২ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৬১.৩৪ পয়েন্টে।

সিএসইতে আজ ১৫৯টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১১টির, কমেছে ৭৫টির এবং ৭৩টি কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে। আজ সিএসইতে মোট ১১ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।