স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সাথে পুঁজিবাজারের কোনো মিল নেই। অর্থনীতির বেশ কিছু সূচক ইতিবাচক থাকলেও পুঁজিবাজারে সঙ্কট কোনো ভাবেই কাটছে না। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে রক্তক্ষরণে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। নিম্নমুখী পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে বাজার থেকে শিল্পায়নের জন্য পুঁজি সংগ্রহ যেকোনো সময়ের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।

পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। পুঁজিবাজারের আড়ালে বাজার থেকে দুষ্টচক্রের পকেট ভারী হয়েছে। আর সঙ্কটের কথা বলে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বেশ কিছু সুবিধা নিয়েছে বাজার সংশ্লিষ্টরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বাড়তি কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আস্থা সঙ্কট না কাটলে বাজার ইতিবাচক হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে প্রণোদনার কথা আসছে। কিন্তু প্রণোদনা দিলে বাজার সাময়িকভাবে উপকৃত হয়। এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। তার মতে, দেশের পুঁজিবাজার অবমূল্যায়িত। কিন্তু বিনিয়োগ হুজুগে মাতে। এতে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আরিফ হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজারে টানা দরপতন হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন বিনিয়োগ করা পুঁজি কমছেই। আর আমাদের নীরবে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

এদিকে টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। সেই সঙ্গে লেনদেন খরা প্রকট হয়ে উঠছে। ফলে পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত নিয়ে দু:চিন্তায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কী হচ্ছে পুঁজিবাজারে। টানা দরপতনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে দিন দিন পুঁজি নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। আজ সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে সূচকের বড় দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে।

এদিন পুঁজিবাজারের সব সূচক কমেছে। তবে সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে আজ যে পরিমাণ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে তার ৯গুন কোম্পানির দর কমেছে। এছাড়া সামনে পুঁজিবাজার আরো দরপতন হতে পারে এমন আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এ দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ১৬ পয়েন্ট। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ৪০ পয়েন্ট। এ নিয়ে টানা তিন কার্যদিবস পুঁজিবাজারে দরপতন হলো।

ডিএসইর তথ্যমতে, আজ বাজারে ৩৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মোট ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৭ হাজার ৭১৫ শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। এতে লেনদেন হয়েছে ৪৬৮ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪১৭ কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। এ দিন দাম বেড়েছে ২৮টি কোম্পানির শেয়ারের, বিপরীতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৬.১৫ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ২৯৯.৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১.৯৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫.৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৬৬.২৭ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১৩৮.৪০ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ ৩৩৬টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৮টির বা ৮.৩৩ শতাংশের। এছাড়া দর কমেছে ১৪২টির বা ৪২.২৬ শতাংশের এবং শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬৬টির বা ৪৯.৪০ শতাংশের। আজ ডিএসইতে ৪৬৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪০.৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬২৪.৩৮ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলো মধ্যে সিএসসিএক্স ২৪.১২ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ১.৯৬ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৬.৪৬ পয়েন্ট এবং সিএসআই ০.৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ১৩৩.৬৩ পয়েন্টে, এক হাজার ৩০৭.৫৪ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩১৯.৩৪ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৬৯.৩৩ পয়েন্টে।

সিএসইতে আজ ১৫৪টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৫টির, কমেছে ৭৪টির এবং ৫৫টি কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে। আজ সিএসইতে মোট ১০ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।