শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: অনেক সতর্ক করার পরও দুর্বল ও বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৭ কোম্পানিতে বিনিয়োগ থামছে না। বরং পুঁজিবাজারে উত্থানের সুযোগে বিতর্কিত কোম্পানির দৌরাত্ম্য বাড়ছে। আয়-মুনাফার সঙ্গে সঙ্গতিহীনভাবে দর বাড়ার কারণে বিনিয়োগ ঝুঁকিও বাড়ছে। শীর্ষ ৭ ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির বর্তমান পিই রেশিও বিএসইসি নির্দেশিত সীমার চেয়ে সর্বোচ্চ ৫০ গুণ বেশি। তারপরও কোম্পানিগুলোর শেয়ার অতিমূল্যায়িত হচ্ছে।

বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানির পিই রেশিও পিই ৪০-এর ওপরে গেলে সেই শেয়ারকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ওই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য মার্জিন ঋণ দেওয়া হয় না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ বিশ্লেষকদের। এছাড়া ইপিএস নেগেটিভ থাকায় পিই রেশি নেগেটিভ রয়েছে কয়েকটি কোম্পানির।

এদিকে দুর্বল শেয়ারের আগ্রহ থাকলেও ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে অনাগ্রহ রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এখন প্রশ্ন বছরের পর বছর ভালো ডিভিডেন্ড (লভ্যাংশ) দেওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। কারণ কি? দুর্বল ক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই কি কারসাজি চক্রকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন না? এই প্রশ্ন বিশ্লেষক, বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অনেকেরই।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গ্যাম্বলিংয়ে যুক্ত। দুর্বল নিম্নমানের জেড ক্যাটাগরির শেয়ার অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠান ডিভিডেন্ট পায় না, তাদের শেয়ারে বিনিয়োগ করছে এক শ্রেণির ব্রোকার হাউজসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। মৌলভিত্তি শেয়ারের বদলে তারা দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দিকেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঝোঁকানোর চেষ্টা চালিয়ে থাকেন বিভিন্ন কৌশলে।

বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই না বুঝে অন্যের কথায় শেয়ার কেনাবেচা করেন। ফলে তারা প্রতিষ্ঠানের মৌলভিত্তির কথা ভুলে যান। এ জন্য একসময় তাদের চরম মূল্যও দিতে হয়। নিজের পুঁজির নিরাপত্তার কথা ভেবেই বিনিয়োগকারীদের সচেতন হওয়া দরকার।’

অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে গেল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ। বৃহস্পতিবার দিন শেষে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও লোকসানে পিই রেশি নেগেটিভ। খারাপ পারফরমেন্সের লোকসানি কোম্পানিটির শেয়ার কেবল কারসাজির কারণেই ধারাবহিকভাবে বাড়ছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শেয়ারটি ৯.৭৪ শতাংশ বেড়ে ২৯ টাকা ৩০ পয়সায় বিক্রেতাশুন্য থেকেছে। এর মাধ্যমে দুর্বল কোম্পানিটির শেয়ার ধারাবাহিকভাবে ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ শেয়ারে পরিণত হয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর ১০ টাকার নিচে ছিল। যা সর্বশেষ ২৯ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

দুই মাসের ব্যবধানের শেয়ারটির দর বেড়েছে ১৫৩ শতাংশ। শেয়ারটির এই অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে দুই বার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করেছে। জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শেয়ারটির অস্বাভাবিকভাবে দর বাড়ার পেছনে কোনো কারণ তাদের জানা নেই। তারপরও শেয়ারটির দর অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, করোনা মহামারির সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সময়ে বিদেশী ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো অর্ডার না পাওয়ায় কোম্পানিটির উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর স্থানীয়ভাবে পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে কোম্পানিটির উৎপাদন আংশিকভাবে চালানো হয়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে একটি সিন্ডিকেট চক্র খান বার্দাসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে এ কারসাজি চলছে। এ বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেখে ও না দেখার ভান করছে। এছাড়া ফেসবুকে একটি চক্র শেয়ারটির দর আরও অনেক বাড়বে বলে গুজব ছড়াচ্ছে। যে কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটির প্রতি অতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে শেয়ারটির চাহিদা বাড়ছে, বাড়ছে দরও।

এদিকে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এলেও এক বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটি উৎপাদনেই নেই। রপ্তানিমুখী ব্যাগ তৈরির কারখানা বন্ধ করে ওই কারখানায় এখন ভাড়ায় অন্য কোম্পানির জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করছে। কারখানা বন্ধ থাকলেও বাজারে শেয়ারের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

এ বিষয় জানতে চাইলে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব তপন কুমার সরকার বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি ছিল রপ্তানিমুখী কারখানা। কিন্তু রপ্তানি বাজারে ক্রয়াদেশ না থাকায় এক বছরের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এখন আমরা গ্রুপের অন্য কোম্পানির জন্য সাবকন্ট্রাক্টে পণ্য তৈরি করছি। কবে নাগাদ কোম্পানিটি চালু হতে পারে, জানতে চাইলে তপন কুমার সরকার বলেন, রপ্তানির ক্রয়াদেশ পেলে আবারও উৎপাদনে ফিরবে কোম্পানি।

এদিকে টানা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে গেল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফুয়াং ফুডস লিমিটেড। বৃহস্পতিবার দিন শেষে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ১৮৯.২৬। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শেয়ারটি ১০ শতাংশ বেড়ে ৪২ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রেতাশুন্য থেকেছে। এর মাধ্যমে দুর্বল কোম্পানিটির শেয়ার ধারাবাহিকভাবে ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে ও লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করছে।

এদিকে টানা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে গেল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ওয়েস্টান মেরিন লিমিটেড। দীর্ঘদিন কোম্পানির বন্ধ থাকলেও হঠাৎ শেয়ার দর উড়ছে ওয়েস্টান মেরিনের। বৃহস্পতিবার দিন শেষে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও নেগেটিভ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শেয়ারটি ৯.০২ শতাংশ বেড়ে ১৩ টাকা ৩০ পয়সায় বিক্রেতাশুন্য থেকেছে। এর মাধ্যমে দুর্বল কোম্পানিটির শেয়ার ধারাবাহিকভাবে ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে অবস্থান করছে।

টানা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে গেল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড। দীর্ঘদিন কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকলেও হঠাৎ শেয়ার দর উড়ছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও নেগেটিভ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শেয়ারটি ৮.৯৮ শতাংশ বেড়ে ২৭ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রেতাশুন্য থেকেছে। এর মাধ্যমে দুর্বল কোম্পানিটির শেয়ার ধারাবাহিকভাবে ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে অবস্থান করছে।

টানা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে গেল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি অলিম্পিক এক্সসরিজ লিমিটেড। দীর্ঘদিন কোম্পানির নামামাত্রা উৎপাদন থাকলেও হঠাৎ শেয়ার দর উড়ছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও নেগেটিভ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শেয়ারটি ৯.৭৯ শতাংশ বেড়ে ১৫ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রেতাশুন্য থেকেছে। এর মাধ্যমে দুর্বল কোম্পানিটির শেয়ার ধারাবাহিকভাবে ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে অবস্থান করছে।

টানা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে গেল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি জেনারেশন নেক্টস লিমিটেড। দীর্ঘদিন কোম্পানির নামামাত্রা উৎপাদন থাকলেও হঠাৎ শেয়ার দর উড়ছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ৮৭। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শেয়ারটি ৭.৮৯ শতাংশ বেড়ে ৮ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রেতাশুন্য থেকেছে।

টানা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়ে গেল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসানয়ন খাতের সেন্ট্রাল ফার্মা লিমিটেড। দীর্ঘদিন কোম্পানির নামামাত্রা উৎপাদন থাকলেও হঠাৎ শেয়ার দর উড়ছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও নেগেটিভ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শেয়ারটি ৩.৩৮ শতাংশ বেড়ে ১৫ টাকা ৩০ পয়সায় বিক্রেতাশুন্য থেকেছে।