শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এ সময় পুঁজিবাজারে চলমান অস্থিরতা নিরসনের বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো স্মারকলিপি আকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পেশ করা হবে বলে মানববন্ধনে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

রোববার দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পুরোনো ভবনের সামনে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে এ শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক, সহ-সভাপতি মহসিন মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন শামীম, অর্থ সম্পাদক পারভেজ আলী প্রমুখ।

মানববন্ধনে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, পুঁজিবাজারে কারসাজি বন্ধে বিএসইসিতে বিএফআইইউর মতো একটি নতুন ইউনিট চালু করার দাবি। যেখানে ডিজিএফআই, এনএসআই এবং এসবির কর্মকর্তারা সংযুক্ত থাকবেন। যা সরাসরি বিএসইসির চেয়ারম্যান নেতৃত্ব দিবেন।বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক বলেন, দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট পুঁজিবাজার গঠনের দাবি।

আজ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানববন্ধন করেছি। পুঁজিবাজারের চলমান অস্থিরতা রোধে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আজ বিকেলে ১২ দফা দাবির একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দিয়ে আসবো। কাজী আবদুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমরা অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত স্মার্ট পুঁজিবাজার গঠনের জন্য আপনার নিকট দাবি রাখছি।

পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সহজ শর্তে অর্থাৎ ৩ শতাংশ সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। যা আইসিবিসহ বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৫ শতাংশ সুদে ঋণ হিসেবে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। এতে পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাবে এবং পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হতে সহায়তা করবে।

পুঁজিবাজারের বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখার বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এতে পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে এবং বাজার স্থিতিশীল হবে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত চলমান ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা, ফোর্সসেল বন্ধ রাখা এবং সব ধরনের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও রাইট শেয়ার ইস্যু বন্ধ রাখার দাবি করছি।

লভ্যাংশের ওপর থেকে ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। কোম্পানিগুলো লভ্যাংশের ঘোষণার পূর্বে সরকারের অগ্রীম যে ট্যাক্স দিয়ে থাকে সেটাকে চূড়ান্ত ট্যাক্স হিসেবে গণ্য করতে হবে। ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় তখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে এবং অস্থিরতা কমবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি ভালো মুনাফা করা স্বত্ত্বেও উপযুক্ত লভ্যাংশ প্রদানে গড়িমসি করে। কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফা ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। উপযুক্ত পরিমাণ লভ্যাংশ পাওয়ার প্রত্যাশায় পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাড়বে এবং বাজার স্থিতিশীল হবে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হার এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হারের পার্থক্য ৭.৫০ শতাংশ। এ সুবিধা ভালোমানের কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত করে না। তাই তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হারের পার্থক্য ১৫ শতাংশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এতে বহু ভালোমানের কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফা বৃদ্ধি পাবে এবং লভ্যাংশ প্রদানেরে সক্ষমতা বাড়বে।

পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার বৃহত্তর স্বার্থে বাইব্যাক আইন পাশ করার জোড় দাবি জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে ইস্যু মূল্যে অথবা এনএভি এর ৫ শতাংশ কম এই দুইটির মধ্যে যেটি বেশি হবে, সেই মূল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে।

অপ্রদর্শিত অর্থ ৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করে বিনা শর্তে শুধুমাত্র পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিবে হবে। এতে পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বিদেশে অর্থের পাচার বন্ধ হবে ও দেশীয় শিল্প উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে। এতে সরকারেরও প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

হাইকোর্ট কর্তৃক নির্দেশিত বিএসইসির ২সিসি ধারা মোতবেক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির পরিচালকদেরকে সম্মেলিতভাবে ২০ শতাংশ ও এককভাবে নূন্যতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে বাধ্য করার দাবি জানাচ্ছি। পুঁজিবাজারের সুশাসন ও স্থিতিশীলতার জন্য ভবিষ্যতে কোনো কোম্পানিকে আইপিও এর মাধ্যমে টাকা তুলতে হলে কমপক্ষে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ার আপলোড করার বিধান রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।