শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বছরজুড়ে পুঁজিবাজারে ছিল বেশ অস্থিরতা। সূচক কমার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে লেনদেন তলানিতে নেমেছে। বাজার পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি ইতিবাচক ধারায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। লেনদেন তলানিতে নামলেও সরকারি বন্ড চালু হওয়ার দিন থেকে বাজার মূলধনে নতুন ইতিহাস গড়েছে, তা পরবর্তীতে ধরে রাখতে পারেনি। বাজারে ঘন ঘন উত্থান পতনের কারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। তবে বৈশ্বিক মন্দা কিছুটা কেটে গেলে দেশের পুঁজিবাজার ভবিষ্যতে আরও সম্ভাবনাময় বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তবে ২০২২ সালে ছয়টি কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করেছে। এছাড়া, একটি মিউচুয়াল ফান্ড ও দুটি ব্যাংক বন্ড ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করে। বিদায়ী বছরে পুঁজিবাজার থেকে মোট ১ হাজার ১০১ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ৬০ টাকা মূলধন সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি কোম্পানি প্রিমিয়াম বাবদ ৮৭ কোটি ৫১ লাখ ৯৮ হাজার ১৩০ টাকা মূলধন উত্তোলন করে৷ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে গত বছরে একটি সুকুক বন্ড ও ১৪টি কোম্পানিসহ মোট ১৫টি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজার থেকে ১ হাজার ৬৫৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে৷ চলতি বছরে মূলধন সংগ্রহ করা কোম্পানিগুলো হলো: জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী কমার্সিয়াল ইন্স্যুরেন্স ও নাভানা ফার্মসিউটিক্যালস।

বন্ডগুলোর মধ্যে আছ: পূবালী ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড ও সিটি ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড। মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে আছে আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড।

পুঁজিবাজার থেকে আইপিও’র মাধ্যমে জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং প্রিমিয়ামসহ ৭৪ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ১৬ কোটি টাকা, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৫ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৪২৫ কোটি টাকা, ইসলামী কমার্সিয়াল ইন্স্যুরেন্স ২০ কোটি ২৬ লাখ ১১ হাজার ৬০ টাকা ও নাভানা ফার্মসিউটিক্যালস প্রিমিয়ামসহ ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।

বন্ডগুলোর মধ্যে পূবালী ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড ৫০ কোটি টাকা ও সিটি ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড ৪০০ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করে। মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড ২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।

এদিকে, পাইপলাইনে থাকা আরও ১৫টি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে ৭২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহের অপেক্ষায় আছে। এ কোম্পানিগুলো চলতি বছরে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেনি। সবকিছু ঠিক থাকলে কোম্পানিগুলো আগামী বছর অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। পাইপলাইনে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেস্ট হোল্ডিংস ৩৫০ কোটি টাকা, ইসলাম অক্সিজেন ৯৩ কোটি টাকা,

পারটেক্স ক্যাবলস ৩০ কোটি টাকা, দুলাল ব্রাদার্স ৩০ কোটি টাকা, এমকে ফুটওয়্যার ১০ কোটি টাকা, গ্লোরিয়াস ক্রপ কেয়ার ১১.৫০ কোটি টাকা, সুব্রা সিস্টেমস ১০ কোটি টাকা, আল-মদীনা ফার্মাসিউটিক্যালস ৫ কোটি টাকা, অ্যাগ্রো অর্গানিকা ১০ কোটি টাকা, ক্লাসিক ফয়েল ৩০ কোটি টাকা, বি ব্রাদার্স গার্মেন্টস ৫০ কোটি, রাইমার কেমিক্যাল ৩০ কোটি, সিকদার ইস্যুরেন্স ১৬ কোটি, এশানা নন-ওভেন ফেব্রিক্স ৩০ কোটি এবং ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ১৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে।

রাইট শেয়ার ইস্যু: ২০২২ সাল ১টি কোম্পানি ১০.৯৮ মিলিয়ন রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মোট ১০৯.৮২ মিলিয়ন টাকা মূলধন সংগ্রহ করে৷ অপরদিকে ২০২১ সালে ২টি কোম্পানি ৫১.৮৪ মিলিয়ন রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৭৭৭.৬৫ মিলিয়ন টাকা মূলধন সংগ্রহ করে৷ এর প্রিমিয়াম বাবদ মূলধন সংগ্রহ করে ২৫৯.২২ মিলিয়ন টাকা৷

মোবাইলে লেনদেনকারী: ২০২২ সাল শেষে মোবাইলে লেনদেনকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৭১০৩ জনে। ২০২২ সালে মোবাইলের মাধ্যমে মোট ১৩.১০ মিলিয়ন আদেশ প্রেরণ করে৷ এর মধ্যে ১০.৮৫ মিলিয়ন আদেশ কার্যকর হয়৷ ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, এ বছর মোবাইলের মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০০,৭৯৮.৩৬ মিলিয়ন অর্থ্যাৎ ৩০ হাজার ৭৯ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা৷ এর মধ্যে ক্রয়ের পরিমান ছিল ১৫৩,৫৩৪.৮৪ মিলিয়ন টাকা এবং বিক্রয়ের পরিমান ছিল ১৪৭,২৬৩.৫২ মিলিয়ন টাকা৷ যা মোট লেনদেনের ১২.৮৩ শতাংশ৷ অপরদিকে ২০২১ সালে মোবাইলে লেনদেনকারীর সংখ্যা ছিল ৭৭০৫৮ জন৷

২০২১ সালে মোবাইলের মাধ্যমে মোট ১৭.৬৪ মিলিয়ন আদেশ প্রেরণ করে৷ এর মধ্যে ১৩.৮৩ মিলিয়ন আদেশ কার্যকর হয়৷ ২০২১ সালে মোবাইলের মাধ্যমে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪২৬,৮১৫.৯০ মিলিয়ন টাকা৷ যা মোট লেনদেনের ১২.০৬ শতাংশ৷ এর মধ্যে ক্রয়ের পরিমাণ ছিল ২১৭,৮২৬.৭০ মিলিয়ন টাকা এবং বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ২০৮,৯৮৯.২১ মিলিয়ন টাকা৷

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২২ সালের শুরুতে ২ জানুয়ারি প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিলো ৬ হাজার ৮৫৩ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই শরিয়াহ সূচক ছিলো ১ হাজার ৪৪৫ পয়েন্টে এবং ডিএস ৩০ সূচক ছিল ২ হাজার ৫৬০ পয়েন্টে। বছরের শেষ দিকে গত বৃহস্পতিবার ২৯ ডিসেম্বর ডিএসইএক্স কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২০৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৫৮ পয়েন্টে। তবে ডিএস ৩০ সূচক দাঁড়িয়েছে ছিলো ২ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে।

বছরের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ছিলো ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৯০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সরকারি সিকিউরিটিজ চালুর দুই দিন পর ১২ অক্টোবর সর্বোচ্চ বাজার মূলধন ছিলো ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬৯ কোটি ১১ লাখ টাকা।