শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ২০২১ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে উচ্চ প্রিমিয়াম নিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানি বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের পুঁজিবাজারের আসার মাত্র ১ বছরের ব্যবধানে চিত্র পাল্টে গেছে। বেড়িয়ে আসছে কোম্পানিটির আসল চিত্র। উচ্চ প্রিমিয়াম নিয়ে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ধোঁকা দিয়েছে।

কোম্পানিটির পুঁজিবাজারে আসছে লুটপাটের জন্য। আর শেয়ারহোল্ডারদের ঠকানোর জন্য কোম্পানিটির মুনাফা অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবী তুলছেন বিনিয়োগকারী সহ বাজার সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ ছিল, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড বুক বিল্ডিংয়ে আসায় কাট-অফ প্রাইস অতিমূল্যায়িত করার জন্য ইস্যু ম্যানেজারের সহযোগিতায় কারসাজি করেছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে আসার আগে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিত করে মুনাফা দেখানোর অভিযোগ আরও পুরোনো। এরমাধ্যমে কোম্পানিটি উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করে টাকা তুলে নিয়েছে। যাতে করে তালিকাভুক্তির পরে শেয়ারহোল্ডারদেরকে দিতে পারছে না সঠিক লভ্যাংশ। এছাড়া কমে এসেছে মুনাফার পরিমাণ। একই সঙ্গে অর্ধেক কোম্পানির শেয়ার দর কাট-অফ প্রাইসের নিচে চলে এসেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রিমিয়াম নেওয়া কোম্পানি থেকেও যদি বিনিয়োগকারীরা অভিহিত মূল্যের কোম্পানির মতো লভ্যাংশ পায়, তাহলে বুক বিল্ডিংয়ে পুঁজিবাজারে আসার দরকার কি? যদি প্রিমিয়ামের বিপরীতে রিটার্ন নাই আসে, তাহলে শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যের কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়াই শ্রেয়। তবে ইস্যু মূল্যের লভ্যাংশের উপরে ক্যাটাগরি নির্ধারনে সুফল আসতে পারে বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, সব ধরনের কোম্পানির লভ্যাংশে অভিহিত মূল্য বিবেচনায় নেওয়ায়, প্রিমিয়াম নেওয়া কোম্পানিগুলোর প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে না। ইস্যু মূল্য বিবেচনায় ক্যাটাগরি নির্ধারন করা হলে, প্রিমিয়াম নেওয়া কোম্পানিগুলোর জন্য ‘এ’ ক্যাটাগরি ধরে রাখা কঠিন হবে। তবে প্রিমিয়াম নেওয়া কিছু কোম্পানির মধ্যে ক্যাটাগরি ধরে রাখার জন্য লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়বে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, উচ্চ প্রিমিয়াম নিয়ে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার পুঁজিবাজারে আসার পর বিনিয়োগকারীদের ঠকানো শুরু করছে। ইস্যু ম্যানেজারের সহযোগিতায় কারসাজি করে উচ্চ মুল্যে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধরিয়ে দিয়ে এখন কোম্পানি লোকসানে। কোম্পানিটি শেয়ার বাইব্যাক করার দাবি তুলেন তিনি।

বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার পুঁজিবাজারে আসার আগের সঙ্গে পরের ব্যবসায়িক পার্থক্য ব্যবধানের ফলে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির লভ্যাংশ ও মুনাফায় ধস নেমেছে। ইতিমধ্যে কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা থেকে বড় ধরনের লোকসানের মুখে। তবে হঠাৎ লোকসানের কারণ কি খতিয়ে দেখার দাবী তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার বাইব্যাক করার দাবী তুলছেন শেয়ারহোল্ডারা।

এদিকে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস ছিল ৩২ টাকা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার পেয়েছে ২৯ টাকায়। সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ২৫ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৩ টাকা ৬০ পয়সা। এ বছর কোম্পানিটি ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যার আগের বছর ছিল সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ।

বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড গত ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১৯ কোটি টাকার বেশি কর-পরবর্তী নিট মুনাফা করেছিল। কিন্তু ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটিকে ৩৯ কোটি টাকার বেশি কর-পরবর্তী নিট লোকসান গুনতে হয়েছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের পর্ষদ। প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ২৭ পয়সা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ১৩ পয়সায়। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ৬০ পয়সায়।

সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ও নিজেদের ব্যবসায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনজনিত লোকসানের কারণে আলোচ্য প্রান্তিকে বড় লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তারা। এদিকে সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের নিট মুনাফা ৬৫ দশমিক ২৩ শতাংশ কমে ২১ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।