শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ইস্যু ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডসহ ৪ টি মার্চেন্ট ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করতে চায়। বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর জানতে চাওয়া হয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সসহ বেশকিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানির আইপিও প্রস্তাবক হওয়ায় কেন বিএমএসএলের লাইসেন্স বাতিল করা হবে না।

আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে এর ব্যাখ্যা জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার বিএসইসির ক্যাপিটাল ইস্যু বিভাগ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে এবিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলেছেন মার্চেন্ট ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য এর যৌক্তিক কারণও তুলে ধরেছেন তারা। একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী অর্থসংবাদকে জানান, বিএসইসি থেকে দেওয়া চিঠিই তো সঠিক নয়। কারণ চিঠি দেওয়া হয়েছে ক্যাপিটাল ইস্যু ডিপার্টমেন্ট থেকে। এই ডিপার্টমেন্ট লাইসেন্স বাতিল করতে চিঠি দেওয়ার কোন এখতিয়ার নেই।

ক্যাপিটাল ইস্যু ডিপার্টমেন্ট থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে চিঠি দিতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ক্যাপিটাল ইস্যু ডিপার্টমেন্টকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যেহেতু বিষয়টি ক্যাপিটাল ইস্যু রিলেটেড তাই এ ডিপার্টমেন্ট থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর শুনানি না হলে তো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। যাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাদের জবাব সন্তোষজনক হলে তা বিবেচনা করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোশিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডন্ট মো. সাইদুর রহমান বলেন, ইস্যু ম্যানেজার কোম্পানিকে আইপিওতে আনার জন্য যদি কোন ডকুমেন্টে ভুল করে থাকে সেটার জন্য জবাবদিহির আওতায় আসতে পারে। কিন্তু ইস্যু অনুমোদনের পর কোন কোম্পানির ভিতরে প্রবেশেরই তো এখতিয়ার নেই। সেখানে একটা কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ব্যবসা খারাপ হতে পারে বা মালিকপক্ষ চুরি করতে পারে, সেটার জন্য ইস্যু ম্যনেজার কেন দায়ী হবে? বিএমবিএ প্রেসিডেন্টের মতে, কোম্পানি তালিকাভুক্তির ১০ বছর পর ব্যবসা খারাপ হতে পারে, ব্যবসার বিষয়ে তো ইস্যু ম্যানেজার কিছু করতে পারে না।

সূত্র জানায়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সসহ গত কয়েক বছরে বেশকিছু কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে মধ্যস্থতাকারীর (ইস্যু ম্যানেজার) ভূমিকা পালন করে বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিগুলো ভালো করতে পারেনি। এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর প্রেক্ষিতে বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্টকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্টকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডসহ গত কয়েক বছর ধরে কিছু কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছে বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের যে প্রসপেক্টাস জমা দেওয়া হয়েছে তা প্রতিষ্ঠানটির নথি, উপকরণ এবং কাগজপত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

প্রসপেক্টাস দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া বিনিয়োগকারীদের সুবিধাজনক। তবে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স তালিকাভুক্তির পর সঠিকভাবে কাজ করছে না। এমন অবস্থায় কমিশন কেন আপনার ইস্যু ব্যবস্থাপনার লাইসেন্স স্থগিত করবে না, তা সাত কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে হবে।

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতিসহ বেশ কিছু অভিযোগ ওঠে। ২০২১ সালের শেষের দিকে বিএসইসি কোম্পানিটিতে বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করে। গেল এক দশকে গ্রাহকদের ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন মালিকপক্ষ বিদেশে পাচার করেছে এমন প্রমাণ পায় বিএসইসি।

গত এক দশকে আত্মসাতকৃত টাকা বিদেশে পাচার করেছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তৎকালীন মালিকপক্ষ। বিপুল পরিমাণ এই অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত ছিলেন ফারইস্ট লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেময়েত উল্লাহ এবং পরিচালক এম এ খালেক। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য জাল নথি পর্যন্ত তৈরি করে।

২ হাজার ১২৫ কোটি টাকার মধ্যে ৮৫৪ কোটি টাকায় বেআইনিভাবে জমি অধিগ্রহণ করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয় ৬৫৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর মুদারাবা মেয়াদী আমানতের বিপরীতে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ৪২১ কোটি টাকা লোপাট করা হয়।

এছাড়াও দুটি ভূয়া সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ১৯২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তৎকালীন মালিকপক্ষ। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য গত বছরের ৯ আগস্ট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয় বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে কোম্পানিটিতে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক দেওয়া হয়। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ হেমায়েত উল্লাহকে অপসারণ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কতৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

সম্প্রতি ফারইস্ট ইসলামী লাইফের প্রায় ২০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় বেক্সিমকো গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান জুপিটার বিজনেস লিমিটেড ও ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। বেক্সিমকোর দুই প্রতিষ্ঠানের পাঁচ জনকে ফারইস্টের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেনকে।

ক্যাপিটাল ইস্যু ডিপার্টমেন্ট থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে চিঠি দিতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ক্যাপিটাল ইস্যু ডিপার্টমেন্টকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

যেহেতু বিষয়টি ক্যাপিটাল ইস্যু রিলেটেড তাই এ ডিপার্টমেন্ট থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর শুনানি না হলে তো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। যাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাদের জবাব সন্তোষজনক হলে তা বিবেচনা করা হবে।