শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে মন্দাভাব চললেও টানা বাড়ছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। সার্বিকভাবে বাজারে যেখানে মন্দাভাব, সেখানে কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে সোনারগাঁও টেক্সটাইলের। এ কারণে বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এ উত্থানের পেছনে কারসাজিই প্রধান কারণ।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ মে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩২ টাকা ৬০ পয়সা। একটানা মূল্যবৃদ্ধির পর মঙ্গলবার দিন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ টাকা ১০ পয়সায়। সেই হিসাবে তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সাড়ে ৪৫ টাকা বা ১৪০ শতাংশ বেড়েছে। অস্বাভাবিক এ মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে গত জুলাইয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে কোম্পানিটিকে চিঠি দেওয়া হয়।

ওই চিঠির জবাবে ৫ জুলাই কোম্পানিটি জানায়, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পেতে পারে এমন কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানে না কোম্পানিটি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের ২৮ জুলাই সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের শেয়ারদর ছিল ৪৮ টাকা ২০ পয়সা। সর্বশেষ গত বুধবার লেনদেন শেষে শেয়ারটির সমাপনী দর দাঁড়িয়েছে ৭৭ টাকা ৬০ পয়সায়। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ২৯ টাকা ৪০ পয়সা বা ৬০ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

এর মধ্যে গত সপ্তাহের তিন কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ১২ টাকা ৬০ পয়সা বা ১৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে গত বুধবার কোম্পানিটির শেয়ার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। এদিন কোম্পানিটির মোট ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৪১২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১১ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে নিট লোকসান ছিল ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৪ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ২৯ পয়সা। ৩১ মার্চ ২০২২ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৩২ পয়সা।

এদিকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পনিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৬৪ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে নিট লোকসান ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৪১ পয়সা।

৩০ জুন ২০২১ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি সোনারগাঁও টেক্সটাইলস। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৩ টাকা ৩৫ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৩ টাকা ৭২ পয়সা। ৩০ জুন ২০২১ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৮ পয়সা।

আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৪ টাকা ৪৩ পয়সা। এর আগে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের জন্যও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি সোনারগাঁও টেক্সটাইলস। ২০১৯ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল সোনারগাঁও টেক্সটাইলস।

১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৬ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পুঞ্জীভূত লোকসান ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ৬৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬। এর মধ্যে ৪৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।