শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে অব্যাহত পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা ভর করেছে। বাজার আরও পড়বে-এমন আতঙ্কে তারা তলানির দরেও শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে প্রতিদিনই সেল প্রেসার বাড়ছে এবং ক্রেতা সংকট কোম্পানির তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঈদের টানা ৯ কার্যদিবস যাবত শেয়ারবাজারে পতন চলছে। যা বিনিয়োগকারীদের দিশেহারা করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর জন্য মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের বিনিয়োগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

দেশের জ্বালানি তেল ও গ্যাস সম্পদ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে গত সোমবার (১৮ জুলাই) সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সরকার। সরকারের এমন ঘোষণা আসার পর শেয়ারবাজারে বড় পতন শুরু হয়। ফলে ক্রেতা সংকটে পড়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট।ৎ

মঙ্গলবারও শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর কমার মাধ্যমে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। পরের দুই কার্যদিবস বুধবার ও বৃহস্পতিবার কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা ফেরায় দরপতনের মাত্রা কিছুটা কমে। তবে পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বাজার। আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারও বড় পতন হয়।

শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক মন্দা কাটাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের কাছে খবর রয়েছে, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলাররা অর্থ বা ক্যাপিটালের অপব্যবহার করেছে।

বিএসইসির এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের বিনিয়োগ যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। তাই কমিশন তাদের বিনিয়োগ সঠিক ব্যবহারে নজরদারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে অব্যবহ্নত অর্থ শেয়ারবাজারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামও গতকাল শনিবার এক টকশোতে তাদের অর্থ খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারেও অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলাপ করেছি। তাদের বলেছি, প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি ট্রেড হচ্ছে। আপনারা সেল অর্ডার দিয়ে রাখছেন এক থেকে দেড় হাজার কোটি। তাহলে বাজার কীভাবে ঠিক হবে? আপনারা দুই-চারটা দিন ধৈর্য ধরেন। এমনিতেই বাই প্রেসার উঠে যাবে। এত সেল প্রেসার দিয়ে রাখলে কি আমরা হ্যান্ডেল করতে পারি?’

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘সাত দিন সেল প্রেসার কম দিলেই বাজার ঠিক হয়ে যাবে। এটা তো ডে ট্রেডারের বাজার না। লং টার্ম ইনভেস্টমেন্টের জায়গা। কিন্তু এটা হতে দেয়া হচ্ছে না। ডেইলি সেল প্রেসার বাড়িয়ে প্যানিক করে।’

বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হয়ে সেল প্রেসার না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের নিজেদের কোনো সমস্যা নেই। অর্থনৈতিক অস্থিরতায় প্যানিকড হয়ে সেল প্রেসার বাড়ানোর জন্যই এমন হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে সেল প্রেসার না বাড়ালে এক সপ্তাহের মধ্যেই ঠিক হবে যাবে।’