অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও তিন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে দরপতনের নেপথ্যে!
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে সূচকের বড় দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ার ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয়ের চাপ বাড়তে থাকায় বড় দরপতন হয়েছে। মুলত বিএসইসি এবং অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পর পুঁজিবাজারে দরপতন থামছে না। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন এ দরপতনের পেছনে কারণ কি? দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ ও বাজার বিশ্লেষকদের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসছে দরপতনের পেছনে মুলত তিন ইস্যু।
প্রথমত, পুঁজিবাজারে টানা আট মাস দরপতন চলতে থাকায় বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা সংকট প্রকট আকার ধারন করায় দরপতন থামছে না। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনা বিএসইসি’র জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্বিতীয়ত, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও মার্কেট মেকাররা শেয়ার ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয় মুডে থাকায় দরপতন থামছে না। এ অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও মার্কেট মেকারদের যে কোন মুল্যে বাজারমুখী করতে হবে।
তৃতীয়ত, এক্সপোজার লিমিট মার্কেট প্রাইসে গণনা করলে ট্রিগার সেল হবেই।যতক্ষণ পর্যন্ত এক্সপোজার লিমিটের সমাধান করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মার্কেটে সক্রিয় কোন সাপোর্ট দিতে পারবেনা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, বিএসইসি এবং ডিএসই এখন কেন কোম্পানিগুলোর শেয়ার কারসাজি নিয়ে তদন্ত করছে। এক বছর আগে যখন কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর তিন-চার গুণ তুলেছিল, তখন কেন তদন্ত করেনি। তাহলে কি বিএসইসি এবং ডিএসইর কর্তাব্যক্তিরাও সেই সময়ে কারসাজির সঙ্গে যুক্ত ছিল? যে কারণে তখন কারসাজির তদন্ত করার তাগিদ অনুভব করেননি।
গত কয়েকদিন যাবত অভিযুক্ত বড় বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন ফোলিও থেকে ফোর্স সেল দিচ্ছেন, যে কারণে বাজার উঠতে না পারছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের ভালো ভালো উদ্যোগও বিফল হয়ে পড়েছে।
কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি সত্যি কারসাজিকারীদের শাস্তি দিতে চায়, তাহলে তাদের লেনদেনও নিয়ন্ত্রণ করতো। নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানে গত কয়েকদিন কারা কারা সেল প্রেসার দিয়ে বাজারে পতন ঘটাচ্ছে। তাদের ফোলিওগুলোর শেয়ার সেল নিয়ন্ত্রণ করলেই বাজার এভাবে অস্থির হতো না।
এদিকে টানা পতনে থাকা পুঁজিবাজার সোমবার ঘুরে দাঁড়ালেও মঙ্গলবার আবার বড় পতন হয়েছে। এদিন পুঁজিবাজারের সব সূচকই কমেছে। সূচকের সাথে অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দর কমেছে। তবে বিক্রয় চাপ থাকায় টাকার পরিমাণে লেনদেন আগের দিন থেকে কিছুটা বেড়েছে।
আজ প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০.০৮ পয়েন্ট বা ০.৭৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২১১.৪৬ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৯.৭০ পয়েন্ট বা ০.৭০ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৪.৬৯ পয়েন্ট বা ০.৬৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৬৭.২৮ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২৯৫.০৫ পয়েন্টে।
ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৬৬০ কোটি ৬৯ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৬৫৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকার।
ডিএসইতে আজ ৩৭৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৫টির বা ১৪.৬৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৭৮টির বা ৭৩.৯৪ শতাংশের এবং ৪৩টির বা ১১.৪৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১২৯.১০ পয়েন্ট বা ০.৭০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৭০.৯০ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৮১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭৬টির, কমেছে ১৭২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির দর। আজ সিএসইতে ১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, ‘বাজার নিয়ে আর কী বলব, কিছুই বলার নাই। কী বলব বুঝতে পারছি না। এত সাপোর্ট, এত কিছু- ভেবেছিলাম বাজার এবার ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু একদিন বেড়েই আবার সেই পতন। কিছুই বলার নেই।’
এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব মজুমদার বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এক্সপোজার লিমিটের সমাধান করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মার্কেটকে সক্রিয় কোন সাপোর্ট দিতে পারবে না। ফলে এক্সপোজার লিমিট মার্কেট প্রাইসে গণনা করলে ট্রিগার সেল হবেই। এর ফলেই দরপতন তরান্বিত হবে।