শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের সুযোগ বাড়িয়ে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে সাবসিডিয়ারি কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ইক্যুইটি বিনিয়োগসীমার বাইরে থাকবে। মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সার্কুলার জারি করে। এটি দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

তবে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের অন্তরায় ভূমিকা রেখে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনেকটা এই বাজারের উন্নয়ন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহ্য করতে না পারার মতো অবস্থা। এই পরিস্থিতির উন্নয়নে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এগিয়ে আসলেও বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগে ‘বড় ছাড়’ ঘোষণা করছে।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমা গণনায় উপাদান ও বিনিয়োগ তথ্য প্রদান নিয়ে এতোদিন ব্যাংকগুলোর প্রতি কঠোর ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আজকের নির্দেশনার মাধ্যমে সেই কঠোরতার মধ্যে নিয়ে আসল লিজিং কোম্পানিগুলোকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের তুলনায় শিথীলতার মধ্যে ছিল।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘পুঁজিবাজারের জন্য এটি বেশ একটি ভালো খবর। এর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বেশ বড় ছাড় দেয়া হয়েছে। তারা এখন পুঁজিবাজারে সরাসরি আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে। গত সাত বছর ধরেই আমরা এই দাবিটি করে আসছিলাম। দেরিতে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দাবিটি মেনেছে। তাই আমরা খুশি।’ তাদের সাত বছরের দাবি পূরণ হয়েছে।

তবে বেশ কয়েক মাস ধরে শেয়ারের ক্রয়মূল্যে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের বিষয় নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এই নীতিতেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগসীমা নির্ধারণের পক্ষে। গত নভেম্বরে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দুই পক্ষের বৈঠকও হয় এই বিষয়ে।

এরপর একটি গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে শেয়ারের বিনিয়োগসীমা নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের আশাহত করলেও এই সার্কুলারের অন্য যেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো তাদের জন্য স্বস্তিকর হতে পারে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩-এর ১৬ ধারায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার ধারণের সর্বোচ্চ সীমার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। তবে বিনিয়োগের কোন কোন উপাদান আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজার বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় তা স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন। এই অবস্থায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত উপাদান অন্তর্ভূক্ত হবে বলে জানিয়েছে।

ক. আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ধারণকৃত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সকল প্রকার শেয়ার, ডিবেঞ্চার, কর্পোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট এবং পুঁজিবাজারের অন্যান্য নিদর্শনপত্রের বাজার মূল্য বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা কোম্পানিসমূহকে প্রদত্ত ইকুয়িটি, দীর্ঘমেয়াদি ইকুয়িটি বিনিয়োগ/ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরী (বিডি) লিঃ ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর শেয়ার ঐ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজার বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে না।

খ, পুঁজিবাজার কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত নিজস্ব সাবসিডিয়ারি কোম্পানি বা সহযোগী কোম্পানিগুলোকে প্রদত্ত ঋণের স্থিতি।

গ, পুঁজিবাজার কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত অপর কোনো কোম্পানি বা কোম্পানিসমূহকে অথবা কোনো স্টক ডিলারকে প্রদত্ত ঋণের স্থিতি এবং তাদের সাথে রক্ষিত তহবিলের স্থিতি (প্লেসমেন্ট বা অন্য যে নামেই অভিহিত করা হউক না কেন);

ঘ, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত কোনো তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা; আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিবরণী প্রতি ত্রৈমাস শেষ হবার পর পরবর্তী মাসের ০৭ (সাত) কর্ম দিবসের মধ্যে সংযুক্ত ছক মোতাবেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে দাখিল করতে হবে।