শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে সূচকের কিছুটা উত্থান হলেও ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক শেয়ারের বড় দরপতন হয়েছে। মুলত বেশ কিছু দিন ধরে এ ৩ খাতে টানা দরপতন শুরু হয়েছে। হঠাৎ করে এ তিন খাতে এত দরপতনের কারন কি এ প্রশ্ন এখন বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে। অন্যদিকে আর্থিত খাতের দরপতন হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানী খাতের শেয়ারে সুবাতাস বইছে।

গত কয়েকদিন ধরে বিনিয়োগকারীরা এ খাতে নতুন করে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন। বিনিয়োগকারীরা অন্যান্য খাতের শেয়ার বিক্রি করে জ্বালানী খাতের শেয়ার ক্রয় করছেন। তবে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ ধসের ১১ বছর পর জ্বালানী খাতের শেয়ার নতুন করে উকি মারছে। ফলে জ্বালানী খাতের বিনিয়োগকারীদের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে।

এদিকে সরকারি জ্বালানি খাতের সাতটি কোম্পানির মধ্যে কেবল একটির দর কমেছে বুধবার। বাকিগুলোর মধ্যে দুটির দর বেড়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণে। জ্বালানি খাতে সরকারি সব কটি কোম্পানি মৌলভিত্তিক, যেগুলো প্রতিবছর আকর্ষণীয় মুনাফা করে বেশ ভালো লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ও সম্পদমূল্য আকর্ষণীয় হলেও গত কয়েক বছর ধরে এগুলো ঘুমিয়ে ছিল। তবে সম্প্রতি এগুলোর শেয়ার দর চাঙা হয়ে উঠতে দেখা গেছে।

তবে একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, পুঁজিবাজারে বেশ কিছু দিন ধরে অস্থিও অবস্থা বিরাজ করছে। বাজারে বেক্রিমকো গ্রুপসহ ওরিয়ন গ্রুপের শেয়ারে টানা দরবৃদ্ধিতে অন্যান্য খাতের শেয়ারের দরপতনের হিড়িক পড়ছে।

এদিকে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় দিনের প্রথম প্রথম ঘণ্টায় লেনদেন শুরু হলেও বাকি সাড়ে তিন ঘণ্টা লেনদেন হয়েছে নিন্মমুখী প্রবণতায়। তবে বুধবার দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায়। এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ২৮ পয়েন্ট।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক বেড়েছে ৮১ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনও। সোমবার দরপতনের পর মঙ্গলবার ও বুধবার টানা দুদিন পুঁজিবাজারে সূচক সামান্য বেড়েছে। সূচক বাড়লেও কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

বুধবার ব্যাংক, বিমা, খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের প্রথম ঘণ্টা পার হতে না হতেই শুরু হয় শেয়ার বিক্রির চাপ। আর এ চাপকে কেন্দ্র করে দিনের বাকি সাড়ে ৩ ঘণ্টা লেনদেন হয়েছে সূচকের নিন্মমুখী প্রবণতায়। এদিন ব্যাংক খাতের ৩২টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ১৯টির।

বিমা খাতের ৫১ কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ৪৮টির। এছাড়া, আর্থিক খাতের ২৩ কোম্পানির দাম কমেছে ১৯টির। অথচ দিনের শুরুতে এসব খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছিল। তবে এ উত্থান টেকেনি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

ডিএসইর তথ্য মতে, বুধবার ডিএসইতে ৩৭৪টি কোম্পানির ৫৪ কোটি ৫৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩৯১টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। এর মধ্যে ১১২টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ২৩১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির।

দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৯ পয়েন্ট বেড়ে সাত হাজার ৩৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক পাঁচ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৬০০ পয়েন্টে ও ডিএসই-৩০ সূচক নয় দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ৭৮৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৬৮১ কোটি ২৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৩৫২ কোটি চার লাখ ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।

বুধবার ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জহোলসিমের শেয়ার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস ও তৃতীয় স্থানে ছিল বেক্সিমকোর শেয়ার। এরপর যথাক্রমে ছিল পাওয়ার গ্রিড, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, জিপিএস ইস্পাত, সাইফ পাওয়ার, ইফাদ অটোস, পাওয়ার গ্রিড ও শাইনপুকুর সিরমিকস লিমিটেড।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮১পয়েন্ট বেড়ে ২১ হাজার ৫১৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩২৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০২টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ১৯৬টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এ বাজারে লেনদেন হয়েছে ১১৬ কোটি ১৪ লাখ ৭৮৫ টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৮৯ কোটি ৮৬ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৯ টাকা।