শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: ম্যাচুরিটি নিয়ে পুঁজিবাজারে তরতর করে সামনে এগুচ্ছে। পুঁজিবাজারের অব্যাহত চাঙ্গাভাব দেখে প্রতিদিনই নতুন নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন।শেয়ারবাজারের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন। তবে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই না জেনেশুনে বিনিয়োগ করছেন। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

তবে সঠিক ধারণা নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কমিয়ে অধিক লাভের সুযোগ রয়েছে।তবে শেয়ারবাজারে কিছুটা ঝুঁকি কমাতে পারলেও শত ভাগ ঝুঁকি মুক্ত থাকতে পারবেন না। কোন বিনিয়োগকারীর পক্ষেই সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত ভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।

‘ঝুঁকি’ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হয়–একথা শুনেই অনেকে বিনিয়োগ করা থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। তবে মজার বিষয় হলো এই ঝুঁকির পিছনেই রয়েছে সফলতার হাতছানি, যা বিনিয়োগকারীকে খুঁজে বের করতে হবে।

শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা এবং কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন তার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে ঝুঁকির মাত্রা। যদি ভালো কোম্পানির শেয়ারে, দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করেন, তাহলে ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা যায়।

শেয়ারবাজার খারাপ হলে সাময়িকভাবে দাম হয়তো কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমতে পারে। কিন্তু তাতে হতাশ না হয়ে আপনাকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, শেয়ারবাজারে শুধুমাত্র টাকা বিনিয়োগ করলেই হবে না। টাকা বিনিয়োগের পাশাপাশি নিজেকে ধৈয্যশীলও হতে হবে।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য অর্থের পাশাপাশি আরও দুটি বিষয় একজন বিনিয়োগকারীর থাকতে হবে। এই দুটি বিষয় হলো-শেয়ারবাজার সম্পর্কিত জ্ঞান এবং ধৈর্য্য। এই তিনটি বিষয় মানে- টাকা, জ্ঞান এবং ধৈর্য্য থাকলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমিয়ে অনেক ভালো লাভ করার সুযোগ লুফে নিতে পারবেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সব থেকে সহজ এবং সাধারণ নিয়ম হলো ভালো শেয়ারে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করা।

ওয়ারেন বাফেটের মতে, শেয়ারে লাভ করতে হয় কেনার সময়। তাই দাম যখন কম থাকে, তখন কেনার ভালো সময় বলে ধরা হয়। যখন শেয়ারবাজার সম্পর্কে বেশীরভাগ মানুষের ধারণাই নেগেটিভ থাকে তখনই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সেরা সময়।

আর যখন দেখবেন সবার মুখে মুখে শেয়ারবাজারের জয়ধ্বনি, তখন বুঝে নিতে হবে সামনে ছোট বা বড় ধরনের পতন আসছে। এই বিবেচনায় বর্তমান সময়টা আমার কাছে মনে হচ্ছে বিনিয়োগের সেরা সময়। তবে সব শেয়ারে নয়। চিন্তা-ভাবনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগের জন্য শেয়ার নির্বাচন করতে হবে।

ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ খাওয়ার চেয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে বেশি লাভ করা যায় যদি আপনি সঠিক সময়ে সঠিক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন।

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট এর তথ্য অনুযায়ী, সাত বছরের বেশি সময় বিনিয়োগ ধরে রেখে একজন বিনিয়োগকারী সবচেয়ে বেশি প্রফিট পেয়েছে ম্যারিকোর শেয়ারে। যা বছরপ্রতি এই হার প্রায় ৩৬ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রফিট পেয়েছে বার্জারের শেয়ার থেকে। এই হার ২৯ শতাংশের বেশি।

রেকিট বেনকিজারের শেয়ারে বিনিয়োগ করে প্রায় ২৮ শতাংশ প্রফিট পাওয়া গেছে। এছাড়া রেনেটার শেয়ার থেকে ২৫ শতাংশ। এগুলো হচ্ছে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট এর তথ্য। আসুন শেয়ারবাজারে ঝুঁকি কমিয়ে লাভ করার কিছু উপায় জেনে নেই

শেয়ারবাজার সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা: আপনার কষ্টের টাকা কোথায় বিনিয়োগ করবেন, কখন শেয়ার কিনবেন, কেন কিনবেন, কোন ক্যাটাগরির শেয়ার কিনবেন, কতদিন পর কোন ক্যাটাগরির শেয়ার বিক্রি করা যায় ইত্যাদি সাধারণ জ্ঞান আপনার মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে।

তবে শেয়ারবাজার একটি বিশাল জগত যেখানে শেখার কোন শেষ নেই। একজন নতুন বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনি সকল বিষয়ে দক্ষ হয়েই বাজারে আসবেন- তা কিন্তু নয়। আপনি আস্তে আস্তে শেয়ারবাজার বুজতে পারবেন। তবে শুরুর আগে সাধারণ শিক্ষা নিয়েই বাজারে আসতে হবে।

কত টাকা কত দিনের জন্য বিনিয়োগ করবেন: একজন বিনিয়োগকারি হিসাবে আপনাকে অবশ্যই টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করতে হবে। একই সাথে একটি নিদিষ্ট সময় ঠিক করতে হবে। হতে পারে আপনি ৫ লাখ টাকা ১ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে চান। যখন সময় এবং টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করতে পারবেন তখন সঠিক পরিকল্পনাও ঠিক করতে পারবেন।

কোন কোম্পানির শেয়ার কিনবেন: ভালো কোম্পানি মানেই ভালো শেয়ার না। আবার খারাপ কোম্পানি মানেই খারাপ শেয়ার না। আপনাকে এমন কোম্পানি বেছে নিতে হবে যাদের কোম্পানি প্রোফাইলও ভালো এবং শেয়ারও ভালো। আপনার নির্বাচিত কোম্পানিটি কোন ধরনের পন্য বা সেবা দেয় তা জানতে হবে। একই সাথে কোম্পানির মালিক কারা তা জানতে হবে।

তাদের অন্য ব্যবসা আছে কিনা, তাদের ফেস ভ্যালু কেমন, কোম্পানির কত টাকা ঋণ আছে, তাদের নামে মামলা আছে কিনা, অন্য ব্যবসায় কেমন লাভ করছে ইত্যাদি বিষয় জানতে হবে।

সবুরের মেওয়া ফলে: শেয়ারবাজারে ঝুঁকি কমানোর অন্যতম সেরা হাতিয়ার হলো ধৈর্য্য ধারণ করা। সাধারণত যখন একজন বিনিয়োগকারী ব্যাংকে ডিপিএস করে বা ফিস্কড ডিপজিট করেন, তখন তিনি অনায়াসে ৭/৮ বছর অপেক্ষা করতে পারেন। কিন্তু যখন ঐ একই বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে আসেন, তখন ঐ একই রকম ধৈর্য্য তার মধ্যে থাকে না। এই অবস্থায় আমাদের উচিত হবে, টাকা ও জ্ঞানের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ধৈর্য্য নিয়ে বিনিয়োগ করা।

ধারাবাহিক বিনিয়োগ করা: শেয়ারবাজারে ঝুঁকি কমানোর অন্যতম সেরা মাধ্যম ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করা। ধরুন, আপনার প্রাথমিক বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকা এবং একই সাথে যদি আপনি প্রতি মাসে আরো ৫ হাজার টাকা করে বিনিয়োগ করতে পারেন, তবে বিশ্বাস করুন আপনি কমপক্ষে ৭০ শতাংশ বিনিয়োগকারীর চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।

ধারাবাহিক বিনিয়োগ করতে পারলে একদিক থেকে লস এড়ানো যাবে এবং একই সাথে মোটা অঙ্কের টাকা প্রফিট করা যাবে। অবাস্তব প্রত্যাশা না করা: আমরা যারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করি তারা সবাই চাই লাভ করতে। তবে একই সাথে লাভের নামে অবাস্তব প্রত্যাশা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

যখনই আপনি অবাস্তব প্রত্যাশা করবেন তখনই আপনার মধ্যে লোভ চলে আসতে পারে এবং যা আপনার অনেক বড় ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত করবে। তাই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি কমাতে চাইলে সকল ধরনের অবাস্তব প্রত্যাশা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

আবেগে শেয়ার কেনা বা বিক্রি না করা: আবেগতাড়িত হয়ে শেয়ার কিনলে লস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। যখন আপনি কোন একটি কোম্পানি নিয়ে এনালাইসিস করবেন তখন টেকনিকাল, ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিসের পাশাপাশি অন্য বিনিয়োগকারীদের সাইকোলজি বোঝার চেষ্টা করবেন। এই অবস্থায় আবেগে পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে নিজেকে বিরত থাকতে হবে।

পরামর্শ গ্রহণ করা: অনেকেই বলে থাকেন, অন্যের কথায় শেয়ার কিনলে লস হয়। আসলে কথাটা ঠিক না। একজন নতুন বিনিয়োগকারী হিসাবে আপনার উচিত হবে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারির কাছ থেকে মতামত গ্রহন করা। একই সাথে যত বেশি বিনিয়োগকারীর সাথে মিশতে পারবেন ততই নানামুখী জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। তবে শতভাগ অন্ধের মত অন্যের কথায় বাই সেল করা মোটেও ঠিক হবে না।

টাকা পয়সার হিসাবে দক্ষতা থাকা: শেয়ারবাজারে প্রতিটি পয়সার বিশাল মূল্য আছে। যত কম দামে কিনে যত বেশি দামে বিক্রি করা যায় লাভ ততই বেশি হয়। আপনি যখন শেয়ার বাই সেল করবেন তখন ব্রোকার হাউস আপনার কাছ থেকে একটি কমিশন কাটবে। ব্রোকার হাউস বুঝে এই কমিশন ৩০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা হয়। এছাড়া বোনাস টাকা, বোনাস শেয়ার, ইত্যাদি কিছু হিসাবে আপনাকে দক্ষ হতে হবে।

এক কোম্পানিতে সকল টাকা বিনিয়োগ না করা: শেয়ারবাজারে ঝুঁকি কমাতে চাইলে কখনই একটি কোম্পানিতে সকল টাকা বিনিয়োগ করবেন না। আপনার হিসাব এবং এনালাইসিস সব সময় সঠিক নাও হতে পারে।

যখনই একটি কোম্পানিতে সকল টাকা বিনিয়োগ করবেন এবং কোন কারণে যদি কোম্পানিটির পারফরমেন্স হয়, তাহলে সমূহ লসের সম্মুখীন হতে পারেন। তাই একাধিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে। যাতে একটিতে লোকসান হলেও অন্যটির মাধ্যমে ব্যালেন্স করা সম্ভব।

অল্প টাকা দিয়ে শুরু করা: শেয়ারবাজারে এক্সপাট হয়ে তার পর যদি বিনিয়োগ করতে চান তবে আপনি কখনই পারবেন না। কারণ অনেক বিষয় রয়েছে যা বাজারে সরাসরি না নামলে বুঝতে পারা যায় না। তাই আগে অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য এবং ভবিষ্যৎ ঝুঁকি কমানোর জন্য অল্প টাকা দিয়ে বিনিয়োগ শুরু করুন।