শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: দীর্ঘ মন্দার পর পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার আভাস দিচ্ছে। হারানো পুঁজি ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে চাঙ্গাভাবে বদৌলতে ভাল-মন্দ সব কোম্পানির শেয়ার দর যেন এক হয়ে গেছে। বরং ভাল কোম্পানির চেয়ে অনেক দূর্বল মৌলের কোম্পানির শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।

এ অবস্থায় সাম্প্রতিক সময়ে দাম বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে বিএসইসির তদন্ত কমিটি গঠন করছে। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার তদন্ত সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এ অবস্থায় ৯ কোম্পানি অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণে জরিমানার কবলে পড়তে পারে।

কোম্পানিগুলো হল- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, জিবিবি পাওয়ার, এমারেল্ড অয়েল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স, ন্যাশনাল ফিড মিল, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ঢাকা ডায়িং, ফুয়াং সিরামিক ও বিকন ফার্মা। এসব কোম্পানির অস্বাভাবিদ দর বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

কোম্পানিগুলোর দর বাড়ার ক্ষেত্রে কারসাজির বা কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বিএসইসি। ওই ৯ কোম্পানির মধ্যে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ৫ কোম্পানি। এগুলো হলো- আনয়োর গালভানাইজিং, পেপার প্রসেসিং, ফু-ওয়াং সিরামিক, বিকন ফার্মা এবং এমারেল্ড অয়েল। পিই রেশিও বিবেচনায় এসব কোম্পানি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিএসইসি’র তদন্ত কমিটির সংবাদে আজ এই ৯ কোম্পানিরই দর কমেছে। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এমারেল্ড অয়েল। বর্তমানে কোম্পানিটির পিই রেশিও ২৮৩.৩৩ পয়েন্ট। এই কোম্পানির দর গত ২৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩ কার্যদিবসে ৫ টাকা ৪০ পয়সা বেড়েছে। কিন্তু গত ২ কার্যদিবস ধরে কোম্পানিটির দর কমেছে। আজ কোম্পানিটির দর কমেছে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা ৬.৮৫ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৩৪ টাকায় লেনদেন হয়।

গত ৫ আগস্ট কোম্পানিটির দর ছিল গত ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন (জানুয়ারি-মার্চ’২১) অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মুলধন যথাক্রমে- ১০০ কোটি টাকা ও ৫৯ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৩৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং : গত এক মাস ধরেই কোম্পানিটির দর ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে। এক মাসের মধ্যে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৬৭ টাকা। আজ কোম্পানিটির দর কমেছে ৯ টাকা ৪০ পয়সা বা ৫.৭১ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ১৫৫ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়। সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন (জানুয়ারি-মার্চ’২১) অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৪০ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মুলধন যথাক্রমে- ২৫ কোটি টাকা ও ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। কোম্পানিটির পিই রেশিও ২৬৪.৭২ পয়েন্ট।

আনোয়ার গালভানাইজিং : এই কোম্পানির দর গত ১০ কার্যদিবস ধরে বাড়ছে। এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৭০ টাকা ৯০ পয়সা। আজ কোম্পানিটির দর কমেছে ৬ টাকা ৮০ পয়সা বা ২.১৩ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৩১৩ টাকায় লেনদেন হয়। গতকাল কোম্পানিটির দর ছিল গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন (জানুয়ারি-মার্চ’২১) অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৫৪ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মুলধন যথাক্রমে- ২০ কোটি টাকা ও ১৫ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৫৪ লাখ টাকা। কোম্পানিটির পিই রেশিও ১০৯.৩৩ পয়েন্ট।

ফুয়াং সিরামিক : গত ৫ আগস্ট ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দর ছিল এই কোম্পানির। ওইদিন কোম্পানিটির দর ছিল ২৭ টাকা ৯ পয়সা। গত এক মাসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৯ টাকা ৮০ পয়সা। আজ কোম্পানিটির দর কমেছে এক টাকা ৪০ পয়সা বা ৫.৩২ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ২৪ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়।

সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন (জানুয়ারি-মার্চ’২১) অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৬ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মুলধন যথাক্রমে- ৫০০ কোটি টাকা ও ১৩৬ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ১২ কোটি ৮৮ টাকা। কোম্পানিটির পিই রেশিও ৬৬.৭০ পয়েন্ট।

বিকন ফার্মা : গত ৩ আগস্ট ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দর ছিল এই কোম্পানির। ওইদিন কোম্পানিটির দর ছিল ২৩০ টাকা ৯০ পয়সা। গত এক মাসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৭৮ টাকা ৬০ পয়সা। আজ কোম্পানিটির দর কমেছে ১২ টাকা ৯০ পয়সা বা ৫.৮১ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ২০৯ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়। সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন (জানুয়ারি-মার্চ’২১) অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২ টাকা ১ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মুলধন যথাক্রমে- ৩০০ কোটি টাকা ও ২৩১ কোটি টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ২৩২ কোটি ৮ টাকা। কোম্পানিটির পিই রেশিও ৪৭.৯৮ পয়েন্ট।

ঢাকা ডায়িং : গত ৫ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা। আজ কোম্পানিটির দর কমেছে ২ টাকা ৩০ পয়সা বা ৮.৬১ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ২৪ টাকা৪ পয়সায় লেনদেন হয়। সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন (জানুয়ারি-মার্চ’২১) অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১৯ পয়সা।

কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মুলধন যথাক্রমে- ৩০০ কোটি টাকা ও ৮৭ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির পুঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ১৪ কোটি ২৫ টাকা লাখ। কোম্পানিটির পিই রেশিও ৩৮.৯৪ পয়েন্ট।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড : এই কোম্পানির দর গত ২৮ ও ২৯ জুলাই ২৩ কার্যদিবসে ১০ টাকা ৫০ পয়সা বেড়েছে। এরপর দুই কার্যদিবস কমার পর গতকাল আবারও দর বেড়েছে। আজ কোম্পানিটির দর কমেছে ৯০ পয়সা বা ০.৭৬ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ১১৮ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়।

সর্বশেষ প্রকাশিত প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন (জানুয়ারি-মার্চ’২১) অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) এক টাকা এক পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মুলধন যথাক্রমে- ১০০ কোটি টাকা ও ৪৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৪৫ কোটি টাকা। কোম্পানিটির পিই রেশিও ২৯.২৩ পয়েন্ট।

ন্যাশনাল ফিড মিল : গত ২৭ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত ৪ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ২ টাকা ২০ পয়সা। কিন্ত গত ৪ কার্যদিবস ধরেই কোম্পানিটির দর কমেছে। ১০ টাকা ৫০ পয়সা বেড়েছে। এরপর দুই কার্যদিবস কমার পর গতকাল আবারও দর বেড়েছে। আজ কোম্পানিটির দর কমেছে ৮০ পয়সা বা ২.৩৬ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৩৩ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়।

সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন (জানুয়ারি-মার্চ’২১) অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৭০ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মুলধন যথাক্রমে- ২০০ কোটি টাকা ও ৯২ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ১৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। কোম্পানিটির পিই রেশিও ১৯.৮৬ পয়েন্ট।

জিবিবি পাওয়ার : এই কোম্পানির দর গত ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে ৯ দিনই বেড়েছে। এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫ টাকা। আজ কোম্পানিটির দর কমেছে এক টাকা ৫০ পয়সা বা ৪.০৪ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৩৫ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়। গত ৩ আগস্ট কোম্পানিটির দর ছিল গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন (জানুয়ারি-মার্চ’২১) অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৩৭ পয়সা। কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মুলধন যথাক্রমে- ২০০ কোটি টাকা ও ১০১ কোটি ৮০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ১৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। কোম্পানিটির পিই রেশিও ২৩.৪২ পয়েন্ট।