শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে সূচক ও লেনদেনে উল্লম্ফন হয়েছে। এতে নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্য সূচক। প্রথমবারের মতো ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স সাড়ে ছয় হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেছে। মূল্য সূচকের এই মাইলফলক স্পর্শের দিনে শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে ব্যাংক কোম্পানিগুলো।

ফলে বীমা ও বস্ত্র খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পরও প্রধান মূল্য সূচক অর্ধশত পয়েন্ট বেড়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে। এতে প্রথম মিনিটেই ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২০ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে যায়।

যার মাধ্যমে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ৫ হাজার ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে যাত্রা শুরু করা ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রথমবারের মতো ৬ হাজার ৫০০ পয়েন্টের মাইলফলক স্পর্শ করে। লেনদেন শুরু হতেই নতুন মাইলফলকে পৌঁছেছে যাওয়া ডিএসইর প্রধান সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সময়ের সঙ্গে আরও বাড়ে। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৫৩৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এটি এযাবতকালের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান। অপরদিকে ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান মূল্য সূচকের এই মাইলফলক স্পর্শের দিনে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে ৩০টির দাম বেড়েছে। বাকি একটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সম্প্রতি ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এমন দাপট আর দেখা যায়নি। অবশ্য এক সময় শেয়ারবাজারের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত হওয়া ব্যাংকের এমন দাপট হরহামেশাই দেখা যেত। তবে ২০১০ সালের ধসের পর ধীরে ধীরে রাজত্ব হারায় ব্যাংক।

এদিকে ব্যাংকের দাপট দেখানোর দিনেও বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দামে ধস নেমেছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের শেয়ারবাজারে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে বীমা খাতের কোম্পানিগুলো। কারসাজির মাধ্যমে কিছু বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম ৪-৫ গুণ বাড়ানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বাড়ার ঘটনা ঘটে গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরেই। অধিক মুনাফার আশায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ সেই অস্বাভাবিক দামে শেয়ার কেনেন। এরপর দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের মধ্যে পড়েন অনেকে।

তবে চলতি বছরের এপ্রিলে আবার বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ সময়ও কিছু বিনিয়োগকারী আবার বীমা কোম্পানির শেয়ার কেনেন। অধিক মুনাফার আশায় এ দফাতেও বীমার শেয়ার কেনা বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন।

আজ ধস নামার মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস ধসের মধ্যে থাকল বীমা খাত। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দামে ব্যাপক দরপতন দেখা যায়। এই খাতের তালিকাভুক্ত ৫১টি কোম্পানির মধ্যে ১০টির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৪১টির।

চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার (ব্যাংক বন্ধ থাকায় রোববার শেয়ারবাজার বন্ধ ছিল) মাত্র সাতটি বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ে। বিপরীতে দাম কমে ৪৩টির। আর আজ মঙ্গলবার ১১টি বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৩৯টির। বাকি একটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বীমা কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি অধিকাংশ বস্ত্র কোম্পানির শেয়ার দাম কমেছে। তালিকাভুক্ত ৫৮ বস্ত্র কোম্পানির মধ্যে ১৫টির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৪০টির দাম কমেছে। আর তিনটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

আজ বীমা ও বস্ত্র খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম কমায় ডিএসইতে সব খাত মিলে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে প্রায় তার সমান সংখ্যক প্রতিষ্ঠান দরপতন হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৭৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭০টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সবকটি মূল্য সূচকের উত্থানের সঙ্গে ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। বাজারটিতে দিনভর লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৩১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২ হাজার ১৮৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

বড় অঙ্কের এই লেনদেনের দিনে টাকার পরিমাণে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১০৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের ৮২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৫৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সাইফ পাওয়ার টেক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, জেনেক্স ইনফোসিস, ফু-ওয়াং সিরামিক, জিপিএইচ ইস্পাত, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৫৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮০ কোটি ১১ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩২৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪১টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।