শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এএফসি এগ্রোর শেয়ার দর বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সত্বেও ভালো কোম্পানিগুলোকে পেছনে ফেলে অস্বাভাবিক হারে দর বাড়ছে। এএফসি এগ্রো বায়োটেক লিমিটেড ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। ডিভিডেন্ড বঞ্চিত করে কারসাজি খেলায় মেতেছে কোম্পানিটি নিয়ে। গত ১ বছরের ব্যধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে।

আর এ কারসাজির সাথে খোদ কোম্পানির কর্মকর্তা সহ বাজারের বড় একটি সিন্ডিকেট জড়িত। এ সিন্ডিকেট এর আগে ও অনেক কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে। কারসাজির সাথে সম্প্রতি দুটো বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে। এবার নতুন কারসাজিতে মেতেছে এএফসি এগ্রো নিয়ে।

এছাড়া সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি মুনাফা থাকলেও ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করছে বিনিয়োগকারীদের। ফলে কোম্পানিটির আয় ব্যয় ও লেনদেনের চিত্র খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি আয় করেছে ০.৩২ টাকা। এর আগের বছর শেয়ার প্রতি আয় ছিল ২.৯৩ টাকা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৮ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ১৮.৪০ পয়সা। মাত্র কয়েক কার্যদিবসে ব্যবধানে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয় ২৪.৯০ পয়সা। অথচ কোম্পানিটি খুবই দুর্বল মৌলের। সবদিক বিবেচনায় কোম্পানিটি বিনিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ২ টাকা ১০ পয়সা বা ৯.২১ শতাংশ দর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৯০ পয়সা, যা গত ১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১২ পয়সা ইপিএস কোম্পানির শেয়ার দর ২৪.৯০ পয়সা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরে লভ্যাংশ দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান রয়েছে।

কোম্পানিটির ১১ কোটি ৫২ লাখ ১৬হাজার ২০০টি শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে রয়েছে মাত্র ৩০.২৯ শতাংশ। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৮.১০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩১.৭০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটি তেমন উৎপাদনে নেই। কোম্পানিটি উৎপাদনে না থাকলেও শেয়ার দরে ওঠানামা করিয়ে আয় করছে কোম্পানিটির নামধারি পরিচালকরা।

২০১৪ সালে পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত হওয়া ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে: ৩০০ কোটি টাকা ও ১১৫ কোটি ২১ লাখ ৬ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। কোম্পানিটির ২০১৩ সালে থেকে ধারাবাহিব স্টক ডিভিডেন্ডের নামে কাগজ ধরিয়ে দিচ্ছে। এতে পরিচালকরা লাভবান হলেও শেয়ারহোল্ডারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০১৩ সাল থেকে টানা স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ভালো কোম্পানিগুলোকে পিছনে ফেলে এ রকম দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ার কারণে বাজারে স্থায়ী স্থিতিশলতা আসছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত এ রকম কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে মনিটরিং করা। কারা এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করছে। শুধু দর বাড়ার কারণে কোম্পানিগুলোকে শোকজ না করে কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি এসব শেয়ারে যারা বিনিয়োগ করছে তাদেরকেও শোকজ করতে হবে। তা না হলে দুর্বল কোম্পানির দাপটে বাজার স্থিতিশীলতা হারাবে।