শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি রহিমা ফুডের পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রি নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৯ এপ্রিল কোম্পানিটির ব্লক মার্কেটে শেয়ার ক্রয়-বিক্রির ঘোষণা দেয়ার পরও ডিএসই’র লেনদেন চিত্রে ব্লক মার্কেটে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হতে দেখা যায়নি।

জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল কোম্পানিটির উদ্যোক্তা মিসেস রাফিয়া চৌধুরীরর পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিশ্বজিত সাহা ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়ে জানান ওইদিনই ব্লক মার্কেটে শেয়ারগুলো বিক্রি করবেন। পক্ষান্তরে ওই কোম্পানির অপর উদ্যোক্তা পরিচালক মো. হাসান, মিস হামিদা এবং ফজলুর রহমান প্রত্যেকেই ৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৯৬টি শেয়ার ব্লক মার্কেটে ওইদিনই ক্রয় করবেন।

কিন্ত ওইদিন ডিএসইর ওয়েবসাইটে ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রহিমা ফুডের লেনদেন ছিল না। এরপর আরও দুই কার্যদিবস ২ মে এবং ৩ মে ব্লক মার্কেটে কোম্পানিটির লেনদেনের কোনো তথ্য দেখা যায় না। এ বিষয়ে একজন বিনিয়োগকারী কোম্পানিতে ফোন করে জানতে চাইলে সন্তোষজনক উত্তর না দিয়ে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করা ওই বিনিয়োগকারী।

‘এ’ ক্যাটাগরির রহিমা ফুড ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকা। কোম্পানিটির পূঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ৮৫ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট ২ কোটি ২০০ শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ৪৫.২৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১২.৮২ শতাংশ, বিদেশিদের হাতে ৪.৯৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৬.৯৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ডিএসই’র ওয়েবসাইটে কোম্পানিটির ডিভিডেন্ডের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

চলতি অর্থবছরে (জুলাই’২০-সেপ্টেম্বর’২০) প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৬ পয়সা। গত বছর একই সময় যার শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল এক টাকা ৭৭ পয়সা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর‘২০-ডিসেম্বর‘২০) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৩ পয়সা। গত বছর একই সময় যার পরিমাণ ছিল ২২ পয়সা।

দুই প্রান্তিক মিলিয়ে ৬ মাসে (জুলাই’২০-ডিসেম্বর’২০) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৮ পয়সা। গত বছর একই সময় যার শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল এক টাকা ৫৫ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ৯ টাকা ৬৫ পয়সা।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ ডিসেম্বর আবারও লেনদেন চালু হয় রহিমা ফুড করপোরেশনের। এর আগে গত বছরের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের স্থগিতাদেশ দ্রুত প্রত্যাহার করে তা জানানোর জন্য চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে লেনদেন স্থগিতাদেশ দ্রুত প্রত্যাহার করে কমিশনকে জানাতে বলা হয়। একইসঙ্গে কোম্পানির লেনদেন চালুর ব্যবস্থার কথাও বলা হয়।

একই দিনে রহিমা ফুডের তালিকাচ্যুতিকে কেন্দ্র করে কয়েকটি বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা ও সুপারিশ চেয়ে চিঠি দেয় বিএসইসি। চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানির স্বেচ্ছায় তালিকাচ্যুতির ক্ষেত্রে ডিএসইর বিস্তৃত কোনো পদ্ধতি আছে কি না? এছাড়া তালিকাচ্যুতির আগে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্ব সম্পর্কে জানাতে বলা হয়।

এছাড়া তালিকাচ্যুত রহিমা ফুড ও কোম্পানিটির পরিচালকদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের কোনো শর্ত পরিপালন না করায় কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা তাও জানতে চেয়েছে কমিশন। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রহিমা ফুড করপোরেশনকে ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই তালিকাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ রহিমা ফুডকে তালিকাচ্যুত করার পরিবর্তে লেনদেন স্থগিত করে রাখে।

তালিকাচ্যুত হওয়ার আগে ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের প্রথম ৯ মাসে প্রতিষ্ঠানটির কোনো ধরণের পণ্য বিক্রি হয়নি। কিন্তু এ সময়ে তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও কারখানা বাবদ ব্যয় বেড়েছে। আগের বছর প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক ব্যয় ছিল ৯৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

সেই সময় ৯ মাসে তা বেড়ে হয়েছে এক কোটি এক লাখ ৯৫ লাখ টাকা। সেই সময়ে বন্ধ থাকা এ প্রতিষ্ঠানটির ২০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ বিক্রি করা হয়, যা নিট মুনাফায় দেখানো হয়েছিল। এরপর প্রতিষ্ঠানটিকে তালিকাচ্যুত করা হয়।