শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: টানা নয় দিন সূচক বেড়ে দুই দিন বাজার সংশোধনের পর আবার টানা দুই দিন বাড়ল সূচক। লেনদেন বেড়ে আবার ছাড়িয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।করোনা পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনে পুঁজিবাজারে লেনদনে বেড়েছে ৪০০ শতাংশ বা চার গুণেরও কিছু বেশি।

লকডাউন শুরু হওযা আগে যেসব বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছিলেন তারাও এখন সক্রিয়। আতঙ্কে কম দামে শেয়ার বিক্রি করে এখন অনেকেই সেই শেয়ার আবার কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন বেশি দামে। সরকার গত ৫ এপ্রিল ১৮ দফা স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা দিয়ে সাতদিনের জনসমাগম, গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা করে। এ সময়ে পুঁজিবাজারের লেনদনে হবে কি হবে না এ নিয়ে আতঙ্কে অনেক বিনিয়োগকারী লকডাউনের আগেই হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত করেছিলেন।

কিন্ত লকডাউন শুরু হওয়ার পর পুরো উল্টো চিত্র দেখা গেল পুঁজিবাজারে, যা সচরাচর দেখা যায় না। সূচক বাড়ে টানা নয় কার্যদিবস। পাশাপাশি আড়াই ঘণ্টার লেনদেনেই একাধিক দিন হাতবদল হয়েছে এক হাজার কোটি টাকার বেশি।

লকডাউন শুরু হওয়ার পর ৫ এপ্রিল পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। এরপর লেনদেন শুরুই বেড়েছে। গত ২০ এপ্রিল পুঁজিবাজারে লেনদেন হয় ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। তারপরের দুদিন লেনদেন সাতশ আর আটশ কোটি টাকায় উঠে ২৫ এপ্রিল আবারও লেনদেন হয় ১ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা, পর দিন হয় এক হাজার ১৯৫ কোটি টাকা।

মাঝে দুদিন আবারও লেনদেন কমে আটশ ও নয়শ কোটি টাকায় নামলেও বৃহস্পতিবার লেনদেন পৌঁছেছে এক হাজার ১৭২ কোটি টাকা। ফলে লকাউনের শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত লেনদেন বেড়েছে ৪০৬ শতাংশ। বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের প্রধান সূচকসহ লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।

পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে পুঁজিবাজারের এমন উত্থান হবে তা কেউ অনুমান করেনি। কারণ গত বছরের লকডাউনের সময় পুঁজিবাজারের যে করুণ অবস্থা হয়েছিল সবাই সেটিই ধারণা করেছিল। ফলে লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই শেয়ার বিক্রি করে অনেকে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত করেছিল।’

সে সময় তিনি নিজেও শেয়ার বিক্রি করে টাকা হাতে রেখেছিলেন। যাতে পরবর্তীতে শেয়ার দর কমলে আরও কিনতে পারেন। কিন্ত এখন সেসব শেয়ারের আর আগের দর নেই। বরং সেসময় শেয়ার বিক্রি না করলে এখন ভালো মুনাফা পেতেন।

সম্মিলিত জাতীয় ঐত্যের সভাপতি আনম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, লকডাউনের আগে আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেছে। কিন্ত এখন যেভাবে পুঁজিবাজারের উত্থান হচ্ছে তাতে তারা মুনাফা পেতেন।

তিনি বলেন, ‘খাতভিত্তিক আলোচনায় এখন সবচেয়ে বেশি এগিয়ে বিমা খাতের শেয়ার। কিন্ত এ খাতের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার এখন অতিমূল্যায়িত। ফলে এ সময়ে যারা বিমা খাতের শেয়ার কিনে অধিক মুনাফার স্বপ্ন দেখছেন তাদের এখনই সর্তক হওয়া উচিত।’

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৮ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৭৯ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৯ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১০ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫২টির, কমেছে ১২৮টির। দর পাল্টায়নি ৭১টির।

লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৯৪০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৫৪ দশমিক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮৪৪ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৯টির, কমেছে ৯৮টির। দর পাল্টায়নি ৫১টির। লেনদেন হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা।