শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে আড়াই ঘন্টার লেনদেন চলবে। ব্যাংক খোলার সিদ্ধান্তের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত পুঁজিবাজারে লেনদেন চলবে।’

এর আগে আজ দুপুরে ব্যাংক খোলার রাখার বিষয়ে মন্ত্রী পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠির পর ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিএসইসি আগে থেকেই বলে আসছিল, ব্যাংক খোলা থাকলেই পুঁজিবাজার খোলা থাকবে। সেই অনুযায়ী, ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে বৃহস্পতিবার থেকে লেনদেন সচল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে ব্যাংক কয়টা থেকে খোলা থাকবে, কোনো ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে তার ওপর নির্ভর করে পুঁজিবাজারের লেনদেন। ব্যাংক খোলার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো চূড়ান্ত নির্দেশনা জারি করেনি। তবে বিএসইসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে শেয়ারবাজার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান সংস্থাটির চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজার খোলা থাকবে। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ধ ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই আলোকে আমরাও পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পুঁজিবাজারের কার্যক্রম শুরু হবে।

এর আগে লকডাউনেও ব্যাংক খোলার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শাখা খোলা থাকবে। ব্যাংকের নিজস্ব কার্যক্রম পরিচারনার জন্য তিনটা পর্যন্ত শাখা খোলা রাখা যাবে। এর আগে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন অধিশাখার উপসচিব রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ব্যাংক খোলা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুরোধ জানানো হয়।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নির্দেশনায় সারাদেশে বৈদেশিক লেনদেন শাখা ছাড়া দেশের সব ব্যাংক বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা আদেশের পর সারাদেশে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলে পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাবে সে কারনে, পুঁজিবাজারেও অনেকটা স্থবিরতা নেমে আসে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। বিশ্বের কোনও দেশেই লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ রাখার নজির না থাকলেও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে সমালোচনা বাড়তে থাকে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে আগামী ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তবে এ সময়ে জেনারেল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করা এডি শাখা ও নৌ, স্থল ও বিমান বন্দর এলাকার শাখাগুলো খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, অথরাইজড ডিলার বা এডি শাখা ও নৌ, স্থল ও বিমান বন্দর এলাকার শাখাগুলোর কার্যক্রম চলমান থাকবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট শাখার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় শাখার আইটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোরে কার্যক্রম চলমান থাকবে। এর আগে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত চলাচলের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা, এই কয়দিন কী করা যাবে, বিশেষ ছাড়ে কী কী করা যাবে প্রজ্ঞাপনে তার উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা আছে, অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনও ভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে করে মানুষকে ঘরে রাখা জরুরি। সবকিছু খোলা রেখে সেটা যেমন সম্ভব না, সব বন্ধ করলেও জীবন-যাপন ব্যাহত হবে। সে কারণেই প্রয়োজন বিষয়টিকে ফোকাস করা হয়েছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া এসময় কোনওভাবেই ঘর ত্যাগ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ব্যাংক বন্ধের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কাল থেকে এক সপ্তাহের জন্য পুঁজিবাজার বন্ধের নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। সেই অনুযায়ী, বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা অনেকটা ছুটির আমেজ নিয়ে বাসায় ফিরে যান।

বাসায় ফিরে দুপুরের পর আবার শুরু হয়েছে চিন্তা। সেই চিন্তা পুঁজিবাজার খুলবে কী, খুলবে না তা নিয়ে। আর সেই অপেক্ষার শেষ হয়েছে বিএসইসির পুঁজিবাজার খোলার রাখার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। তাতে আগামীকাল পয়লা বৈশাখের ছুটির পর পরশু থেকে আবার পুঁজিবাজার চালু হচ্ছে।