শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নানা শঙ্কার মধ্যে বুধবার (০৭ এপ্রিল) ৬৬ কোম্পানির উপর থেকে ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দর সীমা) প্রত্যাহার করে নেয়। যাতে প্রত্যাশিতভাবে লেনদেনের প্রথমদিনেই (বৃহস্পতিবার ০৮ এপ্রিল) সেগুলোর প্রায় সব কোম্পানির দরপতন হয়েছে। এরমধ্যে ব্যতিক্রম ছিল একমাত্র নাভানা সিএনজি। কোম্পানিটির দর বেড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে বুধবার লেনদেন শেষে প্রায় ১১০টি কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে ছিল। এরমধ্যে ৫০ টাকার নিচে অবস্থান করা ৬৬ কোম্পানি থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইস। যেগুলোর বাজার মূলধন ৫ শতাংশের কাছাকাছি।

বিএসইসি ধারণা করেছিল, এ ৬৬ কোম্পানির দর পতন হলেও বাজারে তেমন প্রভাব পড়বে না। যার আলোকে কোম্পানিগুলো থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়। কিন্তু ওইসব কোম্পানির দর পতনে অন্যসব কোম্পানির উপরেও যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সেটি কমিশন আমলে নেয়নি। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ৬৬টি কোম্পানির মধ্যে আজ লেননেদ হয়েছে ৬৩টি কোম্পানির। এরমধ্যে ৬১টির দর পতন হয়েছে। আর নাভানা সিএসজির দর বেড়েছে ও আরএন স্পিনিংয়ের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। বাকি ৩ কোম্পানির শেয়ার রেকর্ড ডেট ও স্থগিতাদেশের কারণে লেনদেন হয়নি।

লেনদেন না হওয়া ৩ কোম্পানির মধ্যে রেকর্ড ডেটের কারণে গোল্ডেন হার্ভেস্টের লেনদেন আজ বন্ধ ছিল। এছাড়া বিডি সার্ভিসের শেয়ার দীর্ঘদিন ধরে বিক্রেতা না থাকায় লেনদেন হয় না এবং পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ করে রেখেছে স্টক এক্সচেঞ্জ। বিনিয়োগকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করে বলছেন, বিএসইসি বড় অসময়ে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়েছে। বাজারে যখন লেনদেন ১৫০০-২০০০ কোটি হচ্ছিল এবং সূচকে তেজিভাব ছিল, ওইসময় ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেওয়া যেত বলে অনেকে মনে করেন। আর এই মুহুর্তে তুলে নেওয়াটাকে খামখেয়ালি বলেই মনে করছেন অনেকে।

তবে কমিশনের একটি সূত্রে জানা গেছে, কমিশন ধারণা করেছিল মূল্যসূচক ৫৯০০ থেকে নেমে কারেকশন হয়ে ৫৬০০ পয়েন্ট পর্যন্ত নামবে। এরপরে সূচক আবার উর্ধ্বমূখী হবে। ওইসময় ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি হয়নি। সূচক ধারাবাহিক পতন হয়ে ৫ হাজার ১শ’র নিচে নেমে যায়। যে কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ি ফ্লোর প্রাইস তোলা সম্ভব হয়নি। এখন বাজার তেজিভাবে ফেরায় প্রতিষ্ঠানটি ফ্লোর প্রাইস তোলার উদ্যোগ নেয়।

দরপতন বিষয় নিয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত তৈরি করে ফ্লোর প্রাইস। যে কোম্পানি লেনদেন হওয়ার কথা, সেটি লেনদেন হচ্ছে না। আর হলেও সেই কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে না। এসব কোম্পানির শেয়ার যেসব বিনিয়োগকারীর কাছে আছে তারা পারছেন না শেয়ার বিক্রি করতে। কারণ যে দরে ফ্লোর প্রাইস ধরা হয়েছে সে দরে কেউ কিনতে চান না।’

তিনি বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়ায় সে কোম্পানিগুলোর এখন হয় শেয়ারের দর বাড়বে না হয় কমবে। বিনিয়োগকারীরা স্বাধীনভাবে তাদের শেয়ার লেনদেন করতে পারবে।’‘লকডাউনের মধ্যে টানা তিন দিন সূচকের উত্থান হয়েছে। এক-দুই দিন কমবে। এটাই স্বাভাবিক। ‘সূচক পতন হয়েছে বলে যেসব বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে তাদের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।’

নিম্নে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেওয়া ৬৬ কোম্পানির তথ্য তুলে ধরা হল: পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স সার্ভিস, আর এন স্পিনিং মিলস, বাংলাদেশ সার্ভিসেস, আইএফআইসি ইসলামি মিউচুয়াল ফান্ড, জাহিন স্পিনিং, রিং সাইন টেক্সটাইল, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ড, নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস, এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড, ইভেন্সি টেক্সটাইল, প্যাসিফিক ডেনিম, মেট্রো স্পিনিং,

কাট্টালী টেক্সটাইল, ফার কেমিক্যাল, দেশবন্ধু পলিমার, ইয়াকিন পলিমার, সাফকো স্পিনিং মিলস, ওয়েস্টান মেরিন শিপইয়ার্ড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যাল, বিচ হ্যাচারি, সীমটেক্স ইন্ডাস্ট্রি, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রি, হামিদ ফেব্রিক্স, প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস, সায়হাম কটন, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস, গোল্ডেন হারভেস্ট, এএফসি অ্যাগ্রো, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, বেঙ্গল ওয়েন্ডসন, এমএল ডাইং, প্যারামাউন্ড টেক্সটাইল, সিনো বাংলা ইন্ডাস্ট্রি, দুলামিয়া কটন, নাহি অ্যালুমিনিয়াম,

খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, উসমানিয়া গ্লাস শিট, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ইসলামি লাইফ, স্ট্যান্ডার্ন্ড ইন্স্যুরেন্স, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, ঢাকা ইলেকট্রনিক্স সাপ্লাই কোম্পানি, নাভানা সিএনজি, গ্লোবাল হ্যাভি ক্যামিকেল, আলিফ ইন্ডাস্ট্রি, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, সায়হাম টেক্সটাইল, রূপালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, কুইস সাউথ টেক্সটাইল মিলস, অ্যাডভান্ট ফার্মা, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, আইপিডিসি