শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: করোনার মধ্যে ওষুধ কোম্পানিগুলোর রমরমা ব্যবসা হলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস উল্টো পথে। এ কোম্পানিটি মুনাফাতো করতে পারেইনি, বরং লোকসানে রেকর্ড গড়েছে। ফলে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লোকসান নিয়ে প্রতারনার অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটির পরিচালকরা বরাবর শেয়ার কারসাজি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কোন ভাবনা নেই তাদের। এছাড়া প্রতি বছরই গুজব রটে কোম্পানিটির মালিকানার পরিবর্তন আসছে। এসব গুজব ছড়িয়ে কোম্পানির পরিচালকরা উচ্চমুল্যে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের হাতে ধরিয়ে দেয়।

এদিকে সেন্ট্রাল ফার্মার ডিভিডেন্ডের নামে প্রতারণার অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ সেন্ট্রাল ফার্মার ডিভিডেন্ড প্রতারণার বিষয় বিএসইকে তদন্তের দাবী জানিয়েছেন। ভালো ব্যবসা দেখিয়ে পুঁজিবাজার থেকে উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করে সেন্ট্রাল ফার্মা। তবে এখন সেই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, কারন করোনায় ওষুধের চাহিদা বাড়লেও অস্বাভাবিক লোকসান দেখিয়েছে কোম্পানিটি। আগের বছর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ০.৪৮ টাকা মুনাফা হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯.২৪ টাকা লোকসান দেখিয়েছে।

সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৯ মাসের (জুলাই ১৯-মার্চ ২০) ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ০.০৭ টাকা। যা শেষ প্রান্তিকের ধসে পুরো অর্থবছরে লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.২৪ টাকায়। অর্থাৎ শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন ২০) করোনার সময় কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ারে লোকসান করেছে ৯.১৭ টাকা। অথচ এই সময় ওষুধের চাহিদা আরও বেড়েছে।

২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরেই সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে। এ অর্থবছরে ১১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ৯.২৪ টাকা হিসেবে মোট ১১০ কোটি ৭০ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে।

অথচ করোনায় দেশের ওষুধ খাতের অন্যান্য কোম্পানিগুলো মুনাফা বেড়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যেই যেমন- স্কয়ার ফার্মার আগের অর্থবছরের ১৪.৯৮ টাকার ইপিএস ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ১৫.৮২ টাকা। এছাড়া বেক্সিমকো ফার্মার ৭.৪৮ টাকার ইপিএস বেড়ে ৮.৬৭ টাকা, রেনাটার ৪২.৩৯ টাকার ইপিএস বেড়ে ৪৫.২৯ টাকা, একমি ল্যাবরেটরিজের ৬.৮১ টাকার ইপিএস বেড়ে ৬.৮৫ টাকা, বিকন ফার্মার ০.৫১ টাকার ইপিএস বেড়ে ১.৬৫ টাকা ও ইন্দোবাংলা ফার্মার ১.৩৯ টাকার ইপিএস বেড়ে ১.৪০ টাকা হয়েছে।

সুত্র মতে, ভালো ব্যবসা দেখিয়ে পুঁজিবাজার থেকে উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস। কোম্পানিটি ইস্যুর জন্য অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখিয়েছে, অন্যথায় এখন শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারনার জন্য ব্যবসায় ধস দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যে কারনে বিভিন্ন কোম্পানির ন্যায় সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস আর্থিক হিসাব পূণ:নিরীক্ষার দাবি তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস ডিভিডেন্ড প্রতারণার কথা উল্লেখ করে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন তদন্তের দাবি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে। বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ.কে.এম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস ডিভিডেন্ডের প্রতারণা, বিএসইতে চিঠি দিবে বলে জানা গেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানিটির অসত্য আর্থিক প্রতিবেদন, দুর্বল করপোরেট গভর্ন্যান্স, লভ্যাংশ প্রদান না করা, রিজার্ভে টাকা রেখে লুটপাট করা, দুর্বল আইপিও অনুমোদন। এ কোম্পানির ডিভিডেন্ড প্রতারণার কারণে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হচ্ছে। পর্যপ্ত মুনাফা ও রিজার্ভ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না।

এ বিষয় পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস ডিভিডেন্ডের নামে বিনিয়োগকারেীদের সাথে প্রতারনা করছে। করোনার মধ্যে যেখানে সকল ওষুধ কোম্পানি ভালো মুনাফা করছে। সেখানে সেন্ট্রাল ফার্মার বড় লোকসান নিয়ে কারসাজির অভিযোগ তুলছেন তিনি। এ কোম্পানির পরিচালকরা স্বচ্ছ নয়। পরিচালকদের অনৈতিক কার্যকলাপের চিত্র ফুটে উঠছে।যার কারনে নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা। এ ব্যাপারে কোম্পানির সচিবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেনি।

ব্যবসায় বড় লোকসানের কারন হিসেবে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের সচিব মো. তাজুল ইসলাম বলেন, করোনার কারনে শ্রমিকেরা না আসা ও বন্যার কারনে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া কিছু মেডিক্যাল প্রোমোশন অফিসার (এমপি) টাকা পয়সা নিয়ে চলে গেছে ও একটি কারখানা ২ মাস বন্ধ থাকার কারনে লোকসান হয়েছে। সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ ও দেশ প্রতিক্ষণ ডটকম