শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ ৩০ শতাংশে উন্নীত করবে বলে জানিয়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফাইন ফুডস লিমিটেড। সম্প্রতি এসইসিতে এক চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা পরিপালনের কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি। ইতিমধ্যেই দেশের দুটি প্রতিষ্ঠিত গ্রুপ ফাইন ফুডসের বেশির ভাগ শেয়ার কিনে নিয়েছে।

২০১১ সালে এসইসি তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ ন্যূনতম ৩০ শতাংশ করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করলেও বর্তমানে ৪১টি কোম্পানি তা পরিপালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে নতুন কমিশন গত ২৭ জুলাই এক নির্দেশনার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম শেয়ার ধারণ করতে ৪৫ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেয়।

বর্তমানে ফাইন ফুডসের মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে মাত্র ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ রয়েছে। এ কারণে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের নির্দেশনা পরিপালনে ২৯ জুলাই ফাইন ফুডসকে চিঠি দেয় এসইসি। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ফাইন ফুডস কর্তৃপক্ষ এসইসিকে জানিয়েছে, এসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম শেয়ার ধারণ করতে ইচ্ছুক। শিগগিরই এ বিষয়ে অগ্রগতি এসইসিকে জানাবে বলে কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দেওয়া চিঠিতে জানিয়েছে।

২০১৯ সালের ৩০ জুন দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ফাইন ফুডসে পাঁচজন পরিচালক রয়েছেন। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ছাড়া অন্য সবাই স্বতন্ত্র পরিচালক। নজরুল ইসলামের কাছে কোম্পানির মোট শেয়ারের ৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

আর কোম্পানির পরিচালক সুজিত সাহার কাছে রয়েছে মাত্র ২৬০টি শেয়ার। এ ছাড়া আরেক স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আলম বিশ্বাসের কাছে ৩ হাজার ৬৬০টি শেয়ার রয়েছে। এসইসির নির্দেশনা পরিপালন করতে হলে কোম্পানির মোট শেয়ারের ২৪ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ার কিনতে হবে। কিন্তু কোম্পানির বর্তমান পরিচালকরা এখনো কোনো শেয়ার কেনার ঘোষণা দেননি।

এদিকে ফাইন ফুডসের পর্ষদ সদস্য হতে ইতিমধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠিত গ্রুপ বাজার থেকে বিপুল পরিমাণের শেয়ার কিনেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এ কোম্পানির ফ্রি-ফ্লোট শেয়ারের বড় অংশই এখন ওই দুই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর মধ্যে একটি গ্রুপ কোম্পানির প্রকল্প পরিদর্শন করে এসেছে।

যদিও এখন পর্যন্ত কোম্পানি কর্তৃপক্ষ পর্ষদ সদস্য হতে কারও কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পায়নি বলে জানিয়েছেন ফাইন ফুডসের কোম্পানি সচিব সোহেল হোসেইন। তিনি জানান, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসইসির নির্দেশনা পরিপালন করা হবে, যা আমরা ইতিমধ্যে চিঠির মাধ্যমে কমিশনকে জানিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি মুনাফায় রয়েছে ফাইন ফুডস। চলতি ২০১৯-২০ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৪৪ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৭ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে সাত গুণের বেশি।

গত পাঁচ বছরে এই কোম্পানির সর্বোচ্চ আয় ছিল ২০১৬ সালে। ওই সময় কোম্পানির নিট মুনাফা হয় ১ কোটি ৬ লাখ টাকা। আর ২০১৯-২০ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ফাইন ফুডসের নিট মুনাফা হয়েছে ২ কোটি ২ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে মাছ চাষ। কিশোরগঞ্জে কোম্পানির মূল প্রজেক্ট। এ ছাড়া ময়মনসিংহে আরেকটি প্রকল্প রয়েছে। সব মিলিয়ে ফাইন ফুডসের প্রায় ২২১ বিঘা জায়গা রয়েছে, যা এখনো পুনর্মূল্যায়ন করা হয়নি।