শেয়ারবার্তা ২৪ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে চার গুজবে ইস্যু করে বর্তমান পুঁজিবাজার উত্তাল পাতাল অবস্থা বিরাজ করছে। বাজার আজ ভাল তো কাল খারাপ। এ অবস্থায় মধ্যে দিয়ে চলছে। যদিও পুঁজিবাজার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী হার্ডলাইনে রয়েছেন তবুও বাজারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীর। কারণ গুজবের ফলে বাজার নিয়ে অজানা আতঙ্কে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরতে না ফিরতেই আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি কারসাজি চক্র। ওই চক্রটি ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেডারের সঙ্গে মিলে ‘মুজিব বর্ষ পর্যন্ত পুঁজিবাজার ভালো থাকবে’ বলে আশ্বাস দিচ্ছে। অন্য একটি গ্রুপ গুজব ছড়াচ্ছে পুঁজিবাজার চাঙা করতে সরকার ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড সহায়তা দেবে। তবে এই আশ্বাসের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আরেকটি গ্রুপ ছড়াচ্ছে সরকার কোনো ফান্ড দেবে না।

আরেকটি গুজবের দ্বন্ধ রয়েছে, ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর সদস্যদের পুনর্মিলনীতেও আলোচনায় উঠে এসেছে কাজী সানাউল হককে ডিএসইতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি। সদস্যরা এখনো তার নিয়োগকে মেনে নিতে পারছেন না এবং পুনর্মিলনীতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এছাড়া গ্রামীণফোনের ডিভিডেন্ড ঘোষণা কেন্দ্র করে নানা গুজব রটছে। এর মধ্যে নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার পাওনা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে নানামুখী সংকটে রয়েছে দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। অবশ্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় থাকার পরও গ্রামীণফোনের আয় বেড়েছে। যদিও এ বিরোধের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা। সরকারি পাওনার বিপরীতে সঞ্চিতির অংশ হিসেবে নিট মুনাফার একটি বড় অংশ সংরক্ষণ করছে কোম্পানিটি। এর গত সাত বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে কম লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হয়েছে গ্রামীণফোনকে।

গত মঙ্গলবার ২০১৯ সালের ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অন্তর্র্বতী লভ্যাংশসহ মোট ১৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে গ্রামীণফোনের পরিচালনা পর্ষদ। এ লভ্যাংশ ২০১৩ সালের পর সর্বনিম্ন। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি নিট মুনাফার চেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিয়েছিল। সে সময় কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ২৬ টাকা ৪ পয়সা, আর লভ্যাংশ হিসেবে ২৮ টাকা করে দেয়। ২০১৩ সালে গ্রামীণফোন ১৪০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এরপর এবারই প্রথম সর্বনিম্ন লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি।

অন্যদিকে তালিকাভুক্ত রিং সাইন টেক্সটাইলের বিদেশি পরিচালকেরা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলন করা টাকা নিয়ে নিজ দেশে চলে গেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে পুঁজিবাজারে। তবে কোম্পানিটির দায়িত্বশীলদের দাবি এ গুঞ্জন সত্য নয়। তারা বলছেন, আইপিওর অর্থের টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই এবং কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাবেই ওই অর্থ রয়েছে।

জানা গেছে, গত ৯ জানুয়ারি রিং সাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুং ওয়ে মিন এবং পরিচালক ও এমডির বোন সুং ওয়েন লি অ্যাঞ্জেলা এবং পরিচালক ও এমডির মামী হাসিয়ো লিউ ই চাই নিজ দেশ গেছেন। এমডির শাশুড়ি মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে তারা নিজ দেশে যান। আর এটাকেই একটি মহল রিং সাইনের পরিচালকেরা আইপিও ফান্ড নিয়ে পালিয়ে গেছেন বলে গুজব ছড়িয়েছে। ব্যক্তিগত স্বার্থে কোন একটি মহল এই গুজব ছড়াতে পারে বলে মনে করছে রিং সাইন কর্তৃপক্ষ। তবে তারা আগামী সপ্তাহে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য বাংলাদেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। তারা চীনা নববর্ষকে কেন্দ্র করে এখনও বিদেশে রয়েছেন। এসব গুজবে পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন হচ্ছে।

অন্যদিকে নানা গুজবের কারনে বিনিয়োগকারীরা প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন আবার কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনছেনও। যেদিন শেয়ার কিনছেন, সেইদিন সূচক ও বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বাড়ছে। আর যেদিন শেয়ার বিক্রি করছেন সেইদিন দরপতন ঘটছে। আর তাতে ফায়দা নিচ্ছে কারসাজি চক্র। এই চক্রটি শেয়ার গুজব ছড়িয়ে শেয়ার দর কমিয়ে শেয়ার কিনছেন। আবার বিক্রির সময় শেয়ার কিনতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে গুজব ছাড়িয়ে দেন। বিনিয়োগকারীরাও আশায় শেয়ার কিনেন। তারপর আবারও ধরা খাচ্ছেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বুধ, বৃহস্পতি এবং রোববার তিনদিন পুঁজিবাজারে উত্থান হয়েছে। সোমবার ফের বাজারে বড় ধরনের দরপতন হলেও মঙ্গলবার ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। ফের বুধবার পুঁজিবাজারে দরপতন ঘটে। বুধবার সূচকের পাশাপাশি লেনদেন কমেছে ডিএসইতে।

তবে যেদিন সূচক বাড়ছে সেদিন অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে। আর যেদিন সূচক কমছে সেদিন অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমছে। এই সময়ে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছে লেনদেনের শীর্ষে থাকা ৫-৮টির ব্রোকারেজ হাউজের কারসাজি চক্র। ফলে বুধবার তাদের শেয়ারের পারিমাণ কম ছিলো। তারা শেয়ার কিনতে গুজব ছড়িয়েছে ‘বিএসইসি শেয়ার কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু কেউ কিনছে না।’

আবার কাজী সানাউল হককে ডিএসইর এমডি নিয়োগ ঠেকাতে একটি গ্রুপ শেয়ার না কিনে বিক্রি করে দরপতন ঘটাচ্ছে। তাতে বুধবার বড় দরপতন হয়েছে।

মশিউর সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী কাজী আবদুল্লাহ বলেন, ‘মুজিব বর্ষ পর্যন্ত’ পুঁজিবাজার ভালো থাকবে বলে আমাকে অনেকে জানিয়েছেন। সেই অনুপাতে শেয়ার কিনছি।

ইবিএল সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী নোমান খান বলেন, আমি শুনেছি পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বোরবার আবারও শুনলাম উল্টো কথা। সরকার ফান্ড দিচ্ছে না। এই কারণে হঠাৎ করে শেয়ার বিক্রি করেছে।

এর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বলেন, রিউমারের (গুজব) কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। গুজবের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের রাস্তা বন্ধ করতে হবে। তাই প্রচলিত আইন শক্তভাবে পরিপালন করা হবে।

সম্প্রতি আগারগাঁওয়ে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কীভাবে বাজারকে আরও গতিশীল করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ডিএসই কিছু প্রস্তাব করেছে। বিএসইসির সুশাসন (কমপ্লাইন্স) একটু দুর্বল, এটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর গুজবের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের রাস্তা বন্ধ করার দাবিটিও আমরা বাস্তবায়ন করব।’

তিনি বলেন, ‘আরেকটা রিউমার হলো টাকার ডিভ্যালুয়েশন, আমরা টাকার ডিভ্যালুয়েশন করব না। আমাদের রেমিটেন্স খাত ডিভ্যালুয়েশন করার কথা বলা হয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে রেমিটেন্স খাতে আমাদের গ্রোথ ৪০ শতাংশ। একটা মাসে একটা আইটেমে ৪০ শতাংশ গ্রোথ বাংলাদেশের ইতিহাস। এই রেকর্ড আর কেউ ব্রেক করতে পারবে না।

এটা প্রমাণ স্বরূপ আনলাম এই কারণে এখানে আমরা টাকার ডিভ্যালুয়েশন করি নাই। শুধু এই খাতকে ২ শতাংশ ইনসেন্টিভ দিয়েছি। যার কারণে আমরা এই সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি। সুতরাং কোনো খাতেই টাকার ডিভ্যালুয়েশন করার সম্ভাবনা নাই। সূত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ