শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে দরপতনের নেপথ্যে কী জেড ক্যাটাগরি, না অন্য ইস্যু এই প্রশ্ন এখন বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে। কারণ বাজার বার বার স্থিতিশীলতার আভাস দিলেও একই চক্র বাজারকে অস্থিতিশীল করতে চায় এরা কারা। তাছাড়া সপ্তাহের প্রথম ও দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। অনেকের দাবি, পতনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে ২২ কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরকরণ।

তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ওইসব কোম্পানির মূলধন খুব বেশি নয়। সেগুলো সূচকে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি। বর্তমানে ৬টি কোম্পানির ওপর সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস বহাল রেখেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর থেকে ধীরে ধীরে গতি ফিরছিল পুঁজিবাজারে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২৯ জানুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১০ কর্মদিবস উত্থান হয়। এই সময়ে সূচকে যোগ হয় ৩৬৮ পয়েন্ট। আর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১১ কর্মদিবস হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৪ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ কর্মদিবস দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।

অথচ গত ছয় কর্মদিবসে উল্টো পথে ছুটছে পুঁজিবাজার। ১২ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬ কর্মদিবসে সূচক কমেছে ১৮৭ পয়েন্ট। এর মধ্যে রোববারই ৫৩ পয়েন্ট হারিয়ে সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৮৩ পয়েন্টে। আর ১১ কর্মদিবস পর হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে লেনদেন হয়েছে ৮১৮ কোটি টাকা।

১০ কর্মদিবস উত্থানের পর কয়েকদিন পতন স্বাভাবিক ছিল। এটিকে পুঁজিবাজারের ভাষায় মুনাফা গ্রহণ বা প্রফিট টেকিং বলা হয়। তবে রোববারের পতনের সঙ্গে নতুন বিতর্ক যোগ হয়েছে। ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়ার কারণেই এই পতন বলে দাবি অনেকের।

কোভিড ১৯ পরিস্থিতির কারণে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ না দিলেও দুই বছর পর্যন্ত ক্যাটাগরি বহাল রাখার সুযোগ দিয়েছিল বিএসইসি। সেটি শেষ হচ্ছে চলতি মাসের ২৮ তারিখে। যেসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হবে, সেগুলো জেড ক্যাটাগরিতে চলে যাবে। তবে একটি চক্র সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ায়, লভ্যাংশ দেওয়া ছাড়াই কোনো কোম্পানি এক বছর, আবার কোনোটি ৬ মাস পর্যন্ত ক্যাটাগরি বহাল রাখার সুযোগ পাচ্ছে।

এরপরই কিসের ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেড গ্রুপে যাবে, সে বিষয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। এতে বলা হয়, ইস্যুয়ার কোম্পানির পরবর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা অথবা বার্ষিক বা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণার দিন থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। অথচ রোববার থেকে ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে ‘ভুতুড়ে’ বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টদের একটি অংশ।

তাঁরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনায় বলা হয়েছে এক রকম, আর বাস্তবায়ন হয়েছে অন্যভাবে। কোম্পানিগুলোর পরবর্তী লভ্যাংশ সংক্রান্ত ঘোষণা আসার পর জেড গ্রুপে স্থানান্তর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগেই হুট করে ২২ কোম্পানিকে জেড গ্রুপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে অনেক বিনিয়োগকারীই লোকসানে পড়েছেন।