শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও পতন প্রবণতা ঘনীভূত হতে থাকে। তারপর বিদেশি আয় ও রপ্তানি আয় যখন বাড়তে থাকে, পুঁজিবাজারও কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। কিন্তু জুলাই মাসে হঠাৎ করে যখন দেশে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানো হয় এবং ডলারের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ে, তখন শেয়ারবাজারে ফের পতনের ধাক্কা শুরু হয়।

জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে পুঁজিবাজারে পতন প্রবণতা অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ে। তখন প্রতিদিনই সূচকের প্রায় সেঞ্চুরি পতন দেখা যায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান যখন পতনের অস্বাভাবিক ধাক্কায় অসহায় হয়ে পড়ে, তখন বাধ্য হয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্বিতীয় দফা ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। সেদিন প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ হাজারের ঘর ভেদ করে ৫ হাজার ৯৮০-তে নেমে যায়।

ফ্লোর প্রাইস আরোপের পরদিন ৩১ জুলাই রোববার পুঁজিবাজারে ৩৮৬ প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইস নিয়ে লেনদেন শুরু করে। ফ্লোর প্রাইস আরোপের প্রথম দিন (রোববার) সূচক বাড়ে ১৫৩ পয়েন্ট এবং ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন শুরু হওয়া ৩৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ফ্লোর প্রাইসে থেকে যায় ৭৬টি। বাকি ৩১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম ফ্লোর প্রাইস অতিক্রম করে উপরে উঠে যায়।

পরের দিন (সোমবার) ডিএসইর সূচক আরও ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ১৬৩-তে। ওইদিন ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠান নেমে দাঁড়ায় ৫১টিতে। তার পরের দিন (মঙ্গলবার) সূচক আরও ৮৬ পয়েন্ট যোগ হয়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৪৯-তে। ওইদিন ফ্লোর প্রাইসের কোম্পানি আরও কমে দাঁড়ায় ৩৪টিতে। পরের দিনও সূচক বাড়ে, কিন্তু ফ্লোর প্রাইসের কোম্পানি সেদিন একটি বেড়ে ৩৫টিতে স্থির হয়। এরপর সূচক মাঝে মধ্যে দুই এক দিন বিরতি দিয়ে উপরের দিকেই উঠতে থাকে, কিন্তু ফ্লোর প্রাইসে কোম্পানির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়তে থাকে।

ফ্লোর প্রাইস আরোপের সাত সপ্তাহের বেশি সময় পার হওয়ার পর আজ (বুধবার) ফ্লোর প্রাইসে ফেরা কোম্পানি সর্বোচ্চ সংখ্যায় দাঁড়িয়েছে। গত দুই সপ্তাহে ফ্লোর প্রাইসে ফেরা কোম্পানি বেশি বেড়েছে। এই সময়ে সূচক যদিও ঊর্ধ্বমুখী ছিল, জুয়াড়ি শেয়ারের লাগামহীন চোটপাটে ফ্লোর প্রাইস কোম্পানির দুর্দিন আরও বেড়ে যায়।

চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) লেনদেনের শুরুতে উদ্বোধনী সূচক ছিল ৬ হাজার ৫১৫। সেদিন ফ্লোর প্রাইসে লেনদেনে থাকা কোম্পানির উদ্বোধনী সংখ্যা ছিল ১০৮। তারপরের দিন মিলে সূচক বেড়েছে ৮৫ পয়েন্ট। কিন্তু দুই দিনে ফ্লোর প্রাইসে ফিরেছে আরও ২৪টি প্রতিষ্ঠান। গতকাল মঙ্গলবারও ফ্লোর প্রাইসে যোগ হয়েছে ১৭টি প্রতিষ্ঠান। এদিন লেনদেন শেষে ফ্লোর প্রাইসে থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৯।

আজ বুধবার আরও ১৭টি প্রতিষ্ঠান ফ্লোর প্রাইস ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে। ফলে ফ্লোর প্রাইসের কোম্পানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৬টিতে। অর্থাৎ শেয়ারবাজারের ৩৮৬টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ফ্লোর প্রাইসে থাকা প্রতিষ্ঠান এখন ১৬৬টি বা ৪৩ শতাংশ। যা শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক আচরণ বলে মনে হয় না।

আজ ডিএসইর প্রধান সূচক অবস্থান করছে ৬ হাজার ৫৫১ তে। সে হিসাবে ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর সূচক বেড়েছে ৫৭১ পয়েন্ট। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস আরোপের প্রথম দিনের ফ্লোর প্রাইসের কোম্পানি ৩৪টি থেকে বেড়ে আজ দাঁড়িয়েছে ১৬৬টিতে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৪টিই ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছে। এ ছাড়া মৌলভিত্তি ও সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেওয়ার রেকর্ড অর্জনের ব্রিটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো, ওয়ালটন হাইটেক, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মার মতো ব্লু চিপস শেয়ারও ফ্লোর প্রাইস ছুঁয়ে লেনদেন করছে। অথচ ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর গত ৭ সপ্তাহে অনেক দুর্বল ও নামমাত্র লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির শেয়ারদর কয়েকগুণ বেড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার এখন জুয়াড়িদের স্বর্গরাজ্য। যেসব শেয়ারে জুয়াড়িদের ছোঁয়া পড়ছে, সেসব শেয়ার বিনা কারণেই ঝলসে উঠছে। দামে ও লেনদেনে চলছে রেকর্ডের পর রেকর্ড। অন্য সব শেয়ার যত ভালো মৌলেরই হোক না কেন, ক্রমেই আকর্ষণহীন হয়ে পড়ছে।