শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা ও শেয়ারের দাম কমার ‘আতঙ্কে’ শেয়ার বিক্রির হিড়িক ছিল। এ চাপে দেশের উভয় পুঁজিবাজারে সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম, সূচক ও লেনদেন। ফলে একদিনেই বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়েছে ১ হাজার ৬১৫ কোটি ১৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। মুলত দেশের প্রধান পুঁজিবাজার (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৪৫ পয়েন্ট। সূচকের এমন পতনে সর্বোচ্চ দায় ছিলো চার কোম্পানি।

মুলত এই চার কোম্পানির জুয়াড়ি নির্ভর। সম্প্রতি এসব শেয়ারের সূচকের উত্থানে বড় ভুমিকা ছিল। এই চার কোম্পানির দায়ে আজ সূচক কমেছে সাড়ে ২৭ পয়েন্ট। যা মোট পতনের ৬০ শতাংশ। এই চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে: বেক্সিমকো লিমিটেড, বিকন ফার্মা, লাফার্জহোলসিম এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস শেয়ার বিক্রির চাপ এতটাই বেশি ছিল যে, দেড় শতাধিক কোম্পানির বিক্রেতা ছিল, কিন্তু ক্রেতা ছিল না। ৩৭১টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ১৫৯টির শেয়ারের দাম। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ৪৫ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১৩০ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি লেনদেন কমেছে হাজার কোটি টাকার বেশি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বুধবার ১৫৫টি কোম্পানির শেয়ারে ছিল ফ্লোর প্রাইস। ফলে শেয়ার বিক্রি করা যায়নি। তাতে লেনদেনও কমেছে। পুঁজিবাজারের কিছু কোম্পানি শেয়ার নিয়ে জুয়াড়িরা কিছুদিন ধরে খেলা করেছে। মঙ্গলবার থেকে সেই শেয়ারগুলোর বিক্রির চাপে লেনদেন বেড়েছে এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু জুয়াড়িদের শেয়ার বিক্রির পরের দিনই এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন কমেছে। অর্থাৎ জুয়াড়িদের শেয়ার বিক্রির ফলে লেনদেন ও সূচকে ভাটা নেমে এসেছে বলে মনে করছে বাজার বিশ্লেষকরা।

তারা বলছে, গুটি কয়েক শেয়ার নিয়ে গত কিছুদিন ধরে পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে একটি চক্র। সেই চক্র শেয়ারগুলোকে টেনে তুলেছে আকাশ চুম্বি। এখন আবারও সেই শেয়ারগুলো বিক্রি করে নিজেদের পায়দা লুটছে বাজার থেকে। যার ফলে বাজারের বেড়েছে শেয়ার বিক্রির চাপ। আর সেই চাপেই গতদিন লেনদেনে বাড়লেও কমেছে সূচক।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের ভয় ও আতঙ্ক রয়েছে। এ আতঙ্কে একটি গ্রুপ শেয়ার বিক্রি, আরেকটি গ্রুপ প্রফিট টেকিং করেছে। এ দুই কারণে আজ দরপতন হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের পতন নরমালি হয়েছে। তবে ভয়ের বিষয় হচ্ছে, বাজার কয়েকটি আইটেমের ওপর নির্ভর করে চলছে। এসব আইটেম বাড়লে ইনডেক্স ও টার্নওভার দুটোই বাড়ছে। আবার কমলে বাজারও নেগেটিভ হচ্ছে।

ডিএসইর অনুযায়ী, বুধবার বাজারে ২৬ কোটি ৯৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৪টি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যার মূল্য ১ হাজার ৮০৮ কোটি ১৯ লাখ ১২ হাজার টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে হাজার কোটি টাকার বেশি। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৭১টি কোম্পানির শেয়ার। এর মধ্যে ৫৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ১৫৯ টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম।

লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৫৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৩৬ পয়েন্টে এবং ডিএস-৩০ সূচক ২৬ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৫ পয়েন্ট বা ০.৬৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৫১.৪৪ পয়েন্টে।

ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১২ পয়েন্ট বা ০.০২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৩৬.৩৫ পয়েন্টে। তবে শরিয়াহ সূচক ২৬.৯৩ পয়েন্ট বা ১.১২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৭৪.৮২ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৮০৮ কোটি ১৯ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১ হাজার ২৪ কোটি ১১ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ। ডিএসইতে আজ ৩৭১ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৫৮টির বা ১৫.৬৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। শেয়ার দর কমেছে ১৫৯টির বা ৪২.৮৬ শতাংশের এবং বাকি ১৫৪টির বা ৪১.৫১ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩০.৭৪ পয়েন্ট বা ০.৬৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩১৯.২৭ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ২৬৮টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০৬টির আর ১১৮টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১২৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।