পরিশোধিত মূলধন নির্ধারিত সীমার নিচে বীমা খাতের ১৩ কোম্পানি
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের ১৩ কোম্পানি মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। তবে দেশে মোট ৭৯টি বীমা কোম্পানির মধ্যে ৩৪টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন নির্ধারিত সীমার নিচে। আইনের ঘাটতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে নেয়া স্থিতাবস্থার সুযোগ নিয়ে কোম্পানিগুলো পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। যদিও প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা ও সম্পদের পরিমাণ বাড়ছে। ১৩ কোম্পানির মধ্যে নন লাইফ ইন্সুরেন্স ১১ টি এবং লাইফ ইন্সরেন্স ২টি।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি কোনো কোম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন পরিশোধিত মূলধন কম থাকলে গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ সমস্যার মুখে পড়তে পারে। আইন অনুযায়ী মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা। বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী জীবন বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে নূন্যতম পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে ৩০ কোটি টাকা এবং সাধারণ বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে ৪০ কোটি টাকা। এই পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে উদ্যোক্তারা যোগান দিবেন ৬০ শতাংশ বাকি ৪০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মুলত ১৫টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার নিচে রয়েছে। । মূলধন ঘাটতির দিক থেকে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে। এখন ৪৬টি নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকার নিচে আছে ১৫টি কোম্পানির। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ১৩ কোম্পানি।
কোম্পানিগুলো হলো: প্রভাতি ইন্সুরেন্সের ৩ দশমিক ৪৮ কোটি, সোনার বাংলা ইন্সুরেন্সের ৪ কোটি টাকা, ফনিক্স ইন্সুরেন্স কোম্পানির ৪ দশমিক শূন্য ৩ কোটি, নর্দার্ন জেনারেল ইন্সুরেন্সের ৪ দশমিক ২৭ কোটি টাকা, ইস্টার্ণ ইন্সুরেন্সের ৪ দশমিক ৩১ কোটি টাকা, সাউথ এশিয়া ইন্সুরেন্সের ৬ কোটি টাকা, প্রগতি ইন্সুরেন্সের ৬ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা, ফেডারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানির ৭ দশমিক ১০ কোটি টাকা,
মেঘনা ইন্সুরেন্স কোম্পানির ২৪ কোটি টাকা, সিকদার ইন্সুরেন্সের ২৪ কোটি, ইউনিয়ন ইন্সুরেন্সের ২৯ দশমিক শুন্য ৪ কোটি টাকা, ইসলামি কমার্শিয়ালের ৩০ দশমিক ৩৯ কোটি, অগ্রণী ইন্সুরেন্সের পরিশোধিত মূলধন ৩১ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা, এবং মার্কেন্টাইলের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩৩ দশমিক ৯০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্সুরেন্সের ১ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা।
ফনিক্স ইন্সুরেন্সের এমডি এবং সিইও মো. জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত বোর্ড কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। অতিরিক্ত কমিশন দিয়ে প্রিমিয়াম ব্যবসায় এখনও ভালো করতে পারছিনা। তবে ভবিষ্যতে ব্যবসায়ের প্রসার হলে হয়তো পরিচালনা বোর্ড পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারে। ’’
অগ্রণী ইন্সুরেন্সের সচিব মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘‘ আমাদের প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন কম থাকাটাই স্বাভাবিক, এতে তো কোনো ক্ষতি দেখছিনা।’’
বীমা বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। এতে গ্রাহকদের বীমা দাবি নিষ্পত্তির ঝুঁকিও কমবে।
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পরিচালক ও বীমা বিশেষজ্ঞ এ কে এম এহসানুল হক বলেন, বীমা আইন অনুযায়ী ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন অপর্যাপ্ত। অধিকাংশ বীমা কোম্পানি আর্থিকভাবে অস্বচ্ছলতায় ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিশোধিত মূলধন যদি কম থাকে তাহলে গ্রাহকদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যদি মূলধন কম থাকে তাহলে, ভবিষ্যতে বীমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকের টাকা দিতে ব্যর্থ হবে।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বীমা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ বীমা খাতকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এখনও সক্ষম হয়ে উঠতে পারেনি। যার ফলে বীমা কোম্পানিগুলো আইনের ফাক ফোকরের সুযোগ নিচ্ছে। যদি কোনো কারণে কোনো কোম্পানি আর্থিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে তখন পরিশোধিত মূলধন যথাযথ মাত্রায় না থাকালে পলিসি হোল্ডারদের বীমা দাবি পূরণ ঝুঁকির মুখে পড়বে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বীমা কোম্পানির উদ্যোক্তারা তার পরিশোধিত মূলধন না বাড়িয়ে মুনাফা টাকা নিজেদের মধ্যে নানা উপায়ে ভাগ করে নেয়। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।
এছাড়া ১৯টি লাইফ বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার নিচে: বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বীমা কোম্পানিগুলোর ২০২১ সালের অনিরিক্ষত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৩৩টি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে ৩০ কোটি টাকার নীচে পরিশোধিত মূলধন আছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ১৯টি।
এর মধ্যে সানফ্লাওয়ার লাইফের ৩ কোটি , গোল্ডেন লাইফের ৩ কোটি, হোমল্যান্ড লাইফের ৩ কোটি, জীবন বীমা কর্পোরেশনের ৫ কোটি, ডেল্টা লাইফের ১২ দশমিক ৩৮ কোটি, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৬ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা, আলফা ইসলামি লাইফের পরিশোধিত মূলধন ১৮ কোটি টাকা, বায়রা লাইফের ১৮ দশমিক ২৬ কোটি, বেস্ট লাইফ ইন্সুরেন্সের ১৮ কোটি , বেঙ্গল ইসলামি লাইফৈর ১৮ কোটি,
ডায়মন্ড লাইফের ১৮ কোটি, যমুনা লাইফের ১৮ কোটি , মার্কেন্টাইল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৮ কোটি, এনআরবি গ্লোবাল লাইফের ১৮ কোটি , প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফের ১৮ কোটি, স্বদেশ লাইফের ১৮ কোটি, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফের ২৪ কোটি এবং জেনিথ ইসলামি লাইফের ১৮ কোটি টাকা।