শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: আলাদিনের চেরাগের মতো পুঁজিবাজারের মাধ্যমেও রাতারাতি বড় লোক হওয়া যায়, সেই কল্পিত কথাই যেন সত্যি করে দেয়ার ব্রত নিয়েছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আইটি খাতের বিডিকম অনলাইন। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পুঁজিবাজারে বিডিকম অনলাইন নিয়ে কারসাজি চলছে। এমনকি কোন কিছু না জেনেই কৃত্রিম ক্রেতার ফাঁদে পড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সহজ সরল বিনিয়োগকারীরা। চার কার্যদিবস পর পুঁজিবাজারে কিছুটা মূল্য সংশোধন ঘটেছে।

অল্প দামে কেনা শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা উঠিয়ে নেওয়ার কারণেই প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার মূল্য সূচক সামান্য কমেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ খুব বেশি কমেনি। এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের সর্তক অবস্থানের কারণে লেনদেনে স্থিতিবস্থা ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা যখন পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে ব্যস্ত সময় পার করছে সেখানে বিডিকম অনলাইনের শেয়ার অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে।

অস্বাভাবিকভাবে লেনদেন হওয়ার কোম্পানিকে দুইবার শোকজ করা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতাদের আগ্রহ কমেনি। উল্টো বেড়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনকেও (বিএসইসি) বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে কোম্পানিটির দরবৃদ্ধির সাথে জড়িত মার্কেট প্লেয়াররা ।আলোচিত এক বিনিয়োগকারী এবার বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত করার চক্রান্তে নেমেছেন বিডিকম অনলাইন নামে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে।

এবার তিনি বিডিকমের শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত করতে কারসাজিতে মেতেছেন। গত ৬ মার্চ বিডিকমের শেয়ারদর ছিল ২৩ টাকা ৬০ পয়সা। আজ ১৪ মার্চ শেয়ারটির দর তোলা হয়েছে ৪১ টাকা ৪০ পয়সায়। এই সাত কার্যদিবসের প্রতিদিনই সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে শেয়ারটি হল্টেড করা হয়েছে। সাত দিনের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।

এখন নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের কাঁধে শেয়ারটি ছাপানোর পাঁয়তারা করছেন। কোম্পানিটির সিংহভাগ শেয়ার ইতোমধ্যে ওই বিনিয়োগকারীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এখন তিনি আগের মতো বড় বড় লেনদেন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার অপপ্রয়াস চালাবেন।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সোমবার ডিএসইতে ৯৮৬ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ১২ কোটি ২২ লাখ টাকা বেশি। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কর্তাব্যক্তিরা সবখানে দাবড়িয়ে বলেছেন, পুঁজিবাজারে কারসাজি করে কেউ পার পাবে না। অথচ এই শেয়ারটি টানা ৭ দিন হল্টেড হয়ে গেল, বিএসইসির কেউ কোন উচ্চবাচ্য করল না।

ডিএসই দু‘বার কোম্পানিটির কাছে জানতে চেয়েছে, শেয়ারটির দর বাড়ার পেছনে কোন সংবেদনশীল তথ্য আছে কী-না। কোম্পানি জানিয়েছে, দর বাড়ার পেছনে সংবেদনশীল কোন তথ্য নেই। ব্যাস! ডিএসইর দৌঁড় শেষ। এতেই প্রতিষ্ঠানটির মহৎ কাজ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটির আর যেন কিছুই করণীয় নেই।

অন্যদিকে, ৭ কার্যদিবস হল্টেড হওয়ার পরও কোম্পানিটির শেয়ারে বিএসইসির সার্ভিলেন্স টিমের নজর পড়েনি। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, তাহলে টানা কতোদিন হল্টেড হলে একটি শেয়ার সার্ভিলেন্স টিমের নজরে পড়বে? নিয়ন্ত্রক সংস্থা কী কারসাজির সংজ্ঞা বদলে ফেলেছে?

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলোচিত ওই কারসাজিকারির হাত নাকি অনেক লম্বা। সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে সবখানেই তার দৌরাত্ব আছে। যে কারণে তিনি ইচ্ছামতো শেয়ারদর বাড়ান, ইচ্ছেমতো কমান। তার শেয়ারের টানাটানি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ মাথা ঘামান না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ কর্তাব্যক্তিরাই নাকি তার কাছ থেকে সুবিধা নেন। কিছু কিছু শেয়ার তাদের এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্ট বাতলিয়ে দেন। এতে তারা ভালো মুনাফা তুলতে পারেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই বিনিয়োগকারীর সব সময়ে দুর্বল মৌলের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেন। তবে কারসাজি শুরু করার পরই কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানিই মুনাফা ও ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্রে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যায়। বিনিয়োগকারীদের কাছে ভালো শেয়ারের তকমা পেতে শুরু হয় যাবতীয় কর্মকান্ডে। যা আগে কোনদিনও দেখা যায়নি।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিডিকম তথ্য প্রযুক্তি খাতের একটি অন্যতম দুর্বল মৌলের কোম্পানি। গত তিন বছর যাবত কোম্পানিটির মুনাফা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ১৯১৯ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১ টাকা ৭২ পয়সা। ১৯২০ সালে যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ১৫ পয়সায়। ২০২১ সালে আরও কমে দাঁড়ায় ১ টাকা ১০ পয়সায়। এদিকে, ২০১৯ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিয়েছিল ৬ শতাংশ ক্যাশ ও ৬ শতাংশ বোনাস। ২০২০ সালে দিয়েছে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস।

সর্বশেষ ২০২১ সালেও দিয়েছে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন হল ৫৭ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে মাত্র ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তাদের শেয়ার রয়েছে ৩০ শতাংশ। কোম্পানিটিতে গত একবছরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমেছে। ৩০ জুন, ২০২১ তারিখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ২৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

যা ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশে। অন্যদিকে, ৩০ জুন, ২০২১ তারিখে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ৪৪ দশমিক ২২ শতাংশ। যা ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ তারিখে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৫৬ শতাংশে।