শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা দেওয়ার পর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজরে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। আর দরপতনের নেপথ্যে পুঁজিবাজারে বাজারমূল্যেই বিনিয়োগসীমার প্রজ্ঞাপন। মুলত পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিনিয়োগকারিদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল ‘ক্রয়মূল্যে বিনিয়োগসীমা’ নির্ধারণ।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে ছিল বাজার মুল্যে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে তা বাজারের জন্য সম্পূর্ণ নেতিবাচক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনার ফলে পুঁজিবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সংকুচিত হবে। এর ফলে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৬৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের স্থান হয়েছে পতনের তালিকায়। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে তা বাজারের জন্য সম্পূর্ণ নেতিবাচক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনার ফলে পুঁজিবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সংকুচিত হবে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক্সপোজার বা বিনিয়োগ বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে গণনা করা।

কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনাতেও বিনিয়োগ বাজারমূল্যে গণনার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্ডের মতো ডেভ সিকিউরিটিজ, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ডকে বিনিয়োগ গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে দেখা গেছে, বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নির্দেশনা। নির্দেশনাটি পুঁজিবাজরের জন্য ভালো না কী মন্দ তা নিয়েই আলোচনা করছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে লেনদেনের সময় এক ঘণ্টা না গড়াতেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাটি পুঁজিবাজারের জন্য নেতিবাচক। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির এক ধরনের চাপ বেড়ে যায়। যার ফলে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

পুঁজিবাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাটি পুঁজিবাজারের জন্য সম্পূর্ণ নেতিবাচক। বন্ড হলো একটা ডেভ ইনুস্টুমেন্ট, এটা ইক্যুইটি না। এটা এক্সপোজারে কীভাবে আসে? দ্বিতীয়ত মিউচ্যুয়াল ফান্ড কোনো শেয়ার না, এটা একটি ইউনিট। এটা কীভাবে এক্সপোজারে আসে। আবার এক্সপোজার গণনা আমরা বারবার বলেছি ক্রয়মূল্যে বিবেচনা করার জন্য, কিন্তু ওনারা বাজারমূল্যই ধরে রেখেছেন। এই নির্দেশনাটা সম্পূর্ণ নেতিবাচক।

নির্দেশনায় আর একটা কথা বলা হয়েছে সাবসিডারি কোম্পানিকে যে ইক্যুইটি দেওয়া হয়েছে তা ওই প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজার বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে না। এটা নতুন কিছু না। আতিউর রহমান গভর্নর থাকা অবস্থাতেই এটার সমাধান হয়েছে। তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের কোন কোন উপাদান শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে, সে বিষয় সুস্পষ্ট করে গত মঙ্গলবার একটি নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘পুঁজিবাজারের জন্য এটি বেশ একটি ভালো খবর। এর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বেশ বড় ছাড় দেয়া হয়েছে। তারা এখন পুঁজিবাজারে সরাসরি আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে।’ ‘গত সাত বছর ধরেই আমরা এই দাবিটি করে আসছিলাম। দেরিতে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দাবিটি মেনেছে।’ তবে এক্সপোজার গণনা আমরা বারবার বলেছি ক্রয়মূল্যে বিবেচনা করার জন্য, কিন্তু ওনারা বাজারমূল্যই ধরে রেখেছেন। এই নির্দেশনাটা সম্পূর্ণ নেতিবাচক বলে তিনি মনে করেন।

এই সার্কুলারটি কীভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াবে তার ব্যাখ্যা করে শাকিল রিজভী বলেন, ‘ধরুন, সিটি ব্যাংকের পুঁজিবাজারে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগসীমা আছে। আবার এই ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি সিটি ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকেও এর বিনিয়োগ আছে। এই বিনিয়োগ এখন সেই ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে পড়বে না। সেই ৩০০ কোটি টাকা কেবল পুঁজিবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবে তারা।’

বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল ‘ক্রয়মূল্যে বিনিয়োগসীমা’ নির্ধারণ। এক্সপোজার গণনা আমরা বারবার বলেছি ক্রয়মূল্যে বিবেচনা করার জন্য, কিন্তু ওনারা বাজারমূল্যই ধরে রেখেছেন। এই নির্দেশনাটি পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এদিকে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটিজের দর কমেছে। আর এ কারণে বড় পতন হয়েছে সূচকে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টাকার পরিমাণে লেনদেন দেড় মাসে সবচেয়ে কম হয়েছে।

জানা গেছে, আজ প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫২.৩৩ পয়েন্ট বা ০.৭৪ শতাংশ কমে ছয় হাজার ৯৯১.৩৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আজ ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৩.০৬ পয়েন্ট বা ০.৮৫ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৪.৭৫ পয়েন্ট বা ০.৯৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৫০৫.১৪ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৫৭৩.৮৫ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ এক হাজার ৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২০৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ২১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার। ডিএসইতে আজ ৩৭৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৫টির বা ১৯.৮৯ শতাংশ শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৫৭টির বা ৬৮.১৭ শতাংশের এবং ৪৫টির বা ১১.৯৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৪৩.৮৯ পয়েন্ট বা ০.৬৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৪৯০.১৮ পয়েন্টে। আজ সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৬৮টির, কমেছে ২১৬টির আর দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির। সিএসইতে আজ ৩৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ