শেয়ারবার্ত ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমায় ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির কস্ট প্রাইসের দাবি দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যাটির সমাধানকল্পে শিগগির কোম্পানি আইনে সংশোধনী আনতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিনিয়োগকারীদের বহুল প্রত্যাশিত পুঁজিবাজারে মার্কেট প্রাইসের (বাজার দরে) পরিবর্তে কস্ট প্রাইসে (ক্রয় মূল্যে) বিনিয়োগ সীমা গণনা করা হবে।

জানা গেছে, ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সীমা গণনায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে এরইমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে, আইন সংশোধনের আগে বিনিয়োগ সীমা কস্ট প্রাইসে গণনা করার বিষয়টি মৌখিকভাবে ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্যও বাংলাদেশ ব্যাংককে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে একটি অনলাইন পোর্টালের সাথে সাক্ষাৎকারে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম। সম্প্রতি এক প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বিএসইসির কোন বিরোধ নেই। একটি স্বার্থান্বেষী মহল এটি বাজারে ছড়িয়ে পেনিক সৃষ্টি করার অপচেচেষ্টা চালায়।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলার মার্কেট প্রাইস কষ্ট প্রাইস নিয়ে যে সমস্যা ছিলো সেটা মন্ত্রনালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলাপ করে সমাধান করছে। এতে করে সেকেন্ডারী মার্কেটের বিনিয়োগকারীর কোন অসুবিধা নেই। তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে আইনের কিছু শব্দগত পার্থক্য রয়েছে, সেটা নিয়ে মন্ত্রনালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এই সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

এরই মধ্যে বিএসইসির চেয়ারম্যানের কথার প্রতিফলনও লক্ষ্য করা গেছে। মন্ত্রনালয় আইন সংশোধনের আগে মৌখিকভাবে বিনিয়োগ সীমা কস্ট প্রাইসে গণনা করার বিষয়টি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছে। এতে করে বাজারে যে পেনিক সৃষ্টি হয়েছে তার অবসান ঘটবে বলে মনে করছে বাজারসংশ্লিষ্টরা।

পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই বিনিয়োগ সীমা গণনায় কস্ট প্রাইসকে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি জানিয়ে আসছে। এর পেছনে শেয়ারাজার উর্ধ্বমূখী ধারায় গেলেই বাজার দর বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সীমা অতিক্রম করে। ফলে বিদ্যমান আইনের কারণে ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিগুলোর বাধ্যতামূলক বিক্রির চাপ আসে এবং বাজারে পতন হয়।

এরই প্রেক্ষিতে গত ০৭ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাথে বৈঠকে বসে অর্থমন্ত্রণালয়। ওইদিন সকাল ১১টায় অর্থমন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং পুঁজিবাজার কার্যক্রম সমন্বয় ও তদারকি কমিটির আহ্বায়ক মফিজ উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সভাশেষে কোন সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারেনি মন্ত্রনালয়সহ দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

তবে মন্ত্রনালয় থেকে বলেছিলো এটি বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগবে। প্রায় তিন মাস পর অবশেষে মন্ত্রনালয় বাংলাদেশ ব্যাংককে আইনটি সংশোধনের আগে মৌখিকভাবে বিনিয়োগ সীমা কস্ট প্রাইসে গণনা করার বিষয়টি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য বলেছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানিগুলোর একক হিসাবে মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ও সাবসিডিয়ারিসহ সমন্বিতভাবে ৫০ শতাংশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।