শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের হঠাৎ বাড়তি আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন করে এ খাতের শেয়ারের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বস্ত্র খাতের শেয়ারের দর তলানিতে ছিল। লভ্যাংশ ঘোষনায় সময় আসায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ার কারন বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন।

সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে বস্ত্র খাতের শেয়ারে বেশি উল্লম্ফন লক্ষ্য করা গেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বস্ত্র খাতের বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড মৌসুম। তারই হাওয়া লেগেছে বস্ত্র খাতেও। এ কারণে এ খাতটি লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বেশ কয়েকবার। এছাড়া সময়ের সাথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় সেক্টর টেক্সটাইল খাত।

তবে হঠাৎ করে ফুলেফেপে ওঠেনি এ খাতটি। গত কয়েক কার্যদিবস ধরে ধারাবাহিক ভাবে ভাল করেছে এ খাতটি। কখনও দর বৃদ্ধির শীর্ষে আবার কখনও লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলো। এবং এর পেছনে যথাযথ কারন রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের মোট ৫০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। আগের বছর দু’ একটি ছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানিই বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়েছে। সে হিসেবে সামনে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আরও ভাল ডিভিডেন্ড আসতে পারে বলে ধারণা বিনিয়োগকারীদের। আর এ জন্যই হয়ত দর বাড়ছে এ খাতের কোম্পানিগুলোর এমনটিই মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চার ইস্যুতে বস্ত্র খাতে বিনিয়োগকারীদের বাড়তি আগ্রহ দেখা দিয়েছে। ইস্যু চারটি নিম্নরূপ: প্রথমত: ডিভিডেন্ড মৌসুমকে কেন্দ্র করে অন্যান্য খাতের মতো হাওয়া লেগেছে বস্ত্র খাতেও। বেশ কিছুদিন ধরেই বস্ত্র খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে।

এ কারণে এ খাতটি লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বেশ কয়েকবার। গত সপ্তাহজুড়ে ড্রাগন সুয়োটার, নুরানী ড্রাইং, সায়হাম টেক্সটাইল, রহিম টেক্সটাইল বাজারের নেতৃত্বে দিয়েছেন। সময়ের সাথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় বস্ত্র খাত। রপ্তানি বাণিজ্যে বস্ত্র খাতের ভূমিকা এবছর শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর পারফর্মেন্সও চোখে পড়ার মতো এগুচ্ছে।

দ্বিতীয়ত: বস্ত্র খাতে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে। বস্ত্রখাতের মোট ৫০টি কোম্পানির মধ্যে ২৮টি কোম্পানি তাদের ফেব্রুয়ারি মাসের শেয়ারহোল্ডিং পজিশন জমা দিয়েছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর শেয়ারহোল্ডিং পজিশনে দেখা গেছে; ৬টি কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর শেয়ারহোল্ডিং পজিশন অপরিবর্তিত রয়েছে। ১২টি কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডিং পজিশন কমেছে। ৮টি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডির পজিশন বেড়েছে।

এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর শেয়ারহোল্ডিং পজিশন বেশি কমেছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজে। গত জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে এই শেয়ারহোল্ডিং পজিশন কমেছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর শেয়ারহোল্ডিং পজিশন ছিল ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ।যা ফেব্রুয়ারি মাস শেষে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। আর নূরানী ডাইংয়ের ১ দশমিক ৭২ শতাংশ শেয়ারহোল্ডিংস কমে এর পরের অবস্থানে রয়েছে।

তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর শেয়ারহোল্ডিং পজিশন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সিমটেক্স, অ্যাপেক্স স্পিনিং এবং জাহিন স্পিনিংয়ে। আলোচ্য মাসে কোম্পানি ৩টির হোল্ডিং পজিশন বেড়েছে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ। উভয়ই ক্রমাগত বাড়ছে।

ধারাবাহিক উত্থানের কারণে দেশের পুঁজিবাজার বিনিয়োগ উপযোগী হয়ে উঠেছে। যার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশিরাও বিনিয়োগে সক্রিয় হচ্ছেন এখাতে। আর এসকল বিষয় আকৃষ্ট করছে দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। এর মধ্যে ড্রাগন সুয়েটার সম্পদ পুর্নমুল্যায়ন করেছে। কয়েকটি কোম্পানি ইতিমধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দিয়েছে। সবকিছু মিলে বস্ত্রখাতে এখন জয়জয়কার।

আর যখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর প্রবেশ ঘটে, তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি হয়। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সাধারণত সব সময়ই বিনিয়োগ করার আগে সেই প্রতিষ্ঠান নিয়ে গবেষণা করে। সে কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঞ্চার হচ্ছে।

তৃতীয়ত: ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ২০২০ সালের মধ্যেই চীনকে টপকে যাবে বাংলাদেশ। ড্র্যাপার্স নামক ব্রিটিশ দৈনিকে এ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ড্র্যাপার্স জানাচ্ছে, গত ৯ বছরের তুলনায় শুধু ২০১৬ সালেই বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। টেক্সটাইল ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে দেখা গেছে, গত নয় বছরে এ হার ১২.২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩.৪ শতাংশে।

তবে, গত ছয় বছরে ইইউভূক্ত দেশগুলোয় চীনের রপ্তানিকৃত পোশাকের পরিমাণ হচ্ছে ৩৭.৯৯ শতাংশ। যদিও ২০১০ সালের দিকে সেখানকার বাজারে অর্ধেকেরও বেশি পোশাক আমদানি হয়েছিলো চীন থেকে। কিন্তু ২০১৬ সালে আগের অবস্থান হারিয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে চীন। ২০১৩ সালের পর থেকে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখে ইউরোপের দেশগুলোতে সবচেয়ে সস্তায় তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে বাংলাদেশ।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ বলেন, বস্ত্র খাতে লভ্যাংশের আশায় এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে । আর তাই ডিভিডেন্ড আশায় বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানির দিকে আগ্রহী হয়ে শেয়ার বেচাকেনা করছেন। আর এরই প্রভাব পড়েছে বস্ত্র খাতে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন বাজারে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করায় বেশিরভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারী ডে ট্রেডারের ভূমিকা পালন করছিলেন। তাদের পাশাপাশি কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও চুপ ছিলেন। এতে বাজার দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, বস্ত্র খাত বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকার অনেক চেষ্টা করছে। তবে কয়েক কার্যদিবস নয় এ খাত যেন সবসময় দেশের পুঁজিবাজার এগিয়ে নিতে সহায়ক হয় সে বিষয়টি মাথায় নিয়ে এগোতে হবে। শুধু পুঁজিবাজার নয় দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সম্বাবনাময় খাতগিুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের প্রেসিডেন্ট মিজান-উর-রশিদ-চৌধুরি বলেন, এখন পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। অন্যদিকে অন্যান্য খাতের মতে, বস্ত্র খাতেরও বেশিরভাগ শেয়ারে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে, যা এসব শেয়ারের দর বৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

তবে ভাল কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ুক এটা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কারন ভাল কোম্পানিগুলো বাজার উন্নয়নে ভূমিকা রাখে সবসময়। কিন্তু খারাপ কোম্পানিগুলোর দামও যে এ সুযোগে বাড়ছে এটাকে ঠেকাতে হবে ।কারন এরা বাজারের জন্য ক্ষতিকর।