শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দীর্ঘ দর পতনের পর বিভিন্ন মহলের একান্ত চেষ্টায় গত বছরের শুরু থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল দেশের পুঁজিবাজার। নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছিল বিনিয়োগকারীরা। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্থান পতনের দিকে যাচ্ছে পুঁজিবাজার।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছিলেন, আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু আজ ভাল কাল খারাপ। টানা দরপতনের বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে বাজার। এছাড়া কয়েকটি কারণে বাজারে পতন চলছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সম্প্রতি এক মাসে একাধিক প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি। নতুন কোম্পানি বাজারে এলেই তার শেয়ারের ব্যাপক চাহিদা থাকে। এর ফলে অনেকেই ভাল মৌলভিত্তির প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে এসব নতুন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে। আবার নতুন শেয়ার বিনিয়োগ করে লোকসানের শিকার হচ্ছেন। ফলে পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।

এছাড়া বেশ কিছু দিন পুঁজিবাজারে আবারও অস্বাভাবিক উত্থান-পতন লক্ষ্য করা যাচেছ। একদিন বড় ধরনের উত্থান দেখা গেলে পরেরদিনই তা বড় পতনে রূপ নিচ্ছে। উত্থানের যেমন কোন কারণ থাকছে না, তেমনি পতনেরও কোন কারণ থাকছে না। আবার একদিন লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ালে পরেরদিনই তা আবার অর্ধেকে নেমে আসছে। পুঁজিবাজারের এই অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের জন্য বাজার সংশ্লিষ্টরা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়ী করছেন।

এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা এ উত্থান-পতনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দায়ী করছেন। তাঁদের মতে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের একক প্রাধান্যই অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের মূল কারণ।

অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দাবার গুটি হিসাবে পরিচিত সাধারণ ও স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীরা গুজবে আশক্ত হয়ে অনেক বেশি প্রত্যাশা নিয়ে শেয়ার কেনেন, কিন্তু বাজার যখন পড়তে থাকে তারা খুব বেশি ভীত হয়ে শেয়ার বিক্রি শুর করে দেন। এতে বাজার টালমাটাল হয়ে হয়ে পড়ে এবং সুবিধা পায় আবারও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন আগের সপ্তাহে হাজার কোটি টাকা ছাড়ালেও বিদায়ী সপ্তাহে আবার ৭০০ কোটির ঘরে ফিরে আসে। অন্যদিকে, আগের সপ্তাহে সূচকের ধারাবাহিকতা কিছুটা বজায় থাকলেও বিদায়ী সপ্তাহে তা অস্বাভাবিক আচরণে রূপ নেয়।

বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক পড়ে যায় ৩৬ পয়েন্ট। পরেরদিন সোমবারও প্রধান সূচক হ্রাস পায় ২১ পয়েন্ট। তবে পরের দুই দিন মঙ্গলবার ও বুধবার সূচক বৃদ্ধি পায়। মঙ্গলবার সূচক বৃদ্ধি পায় ২৯ পযেন্ট এবং বৃদ্ধি পায় ৩৩ পয়েন্ট। কিন্তু দুই দিন সূচক বেড়ে বৃহস্পতিবার আবারও পতনে রূপ নেয়। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচকের পতন হয় ৩৮ পয়েন্ট। সূচকের এ উত্থান-পতনের আচরণ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না বাজার বিশ্লেষকরা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ডিএসইর বর্তমান মার্কেটের তুলনায় প্রতিদিন সূচকের ২০-২৫ পয়েন্ট উঠা-নামা স্বাভাবিক। কিন্তু এর সূচকের উঠা-নামা করলে এর পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কোন দূরভিসন্ধি রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।

তাঁরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো ডেইলি ট্রেডারদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেমন ডে নিটিংয়ে অভ্যস্ত, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়েগাকরীরা ডে নিটিংয়ের প্রতি অতি মাত্রায় আগ্রহী হয়ে উঠছে।

তারা নিটিংয়ে বেশি লাভবান হতে চায় বলেই বাজারে এতো বড় উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটছে। তারা অভিযোগ করছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখন আর দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগে আগ্রহী নয়। ডে ট্রেডারদের মতো স্বল্প সময়ে বেশি মুনাফায় তারাও বিশ্বাসী হয়ে উঠছে।

অন্যদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দাবার গুটি হিসাবে পরিচিত সাধারণ ও স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীরা গুজবে আশক্ত হয়ে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে শেয়ার কেনেন, কিন্তু বাজার যখন পড়তে থাকে তারা খুব বেশি ভীত হয়ে শেয়ার বিক্রি শুরু করে দেন। এতে বাজার টালমাটাল হয়ে হয়ে পড়ে এবং সুবিধা পায় আবারও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ডেইলি ট্রেডারের ভূমিকা পরিত্যাগ না করলে বাজারের এ অস্বাভাবিক ধারার অবসান হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারের সূচকগুলো বাড়তে দেখলে সাধারণ মানুষ অধিক হারে বাড়তে থাকে। সময়ের সঙ্গে তা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। তাদের সিংহভাগের বিনিয়োগ মৌলভিত্তি বিবেচনায় হয় না। গুজবের উপর ভিত্তি করে তাদের বিনিয়োগ হয়। আবার কোনো কারণে দরপতনের ভীতি ছড়িয়ে পড়লে তারাই সবার আগে শেয়ার বিক্রি করেন। তখনই দরপতন ত্বরান্বিত হয়। এদিকে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভাটা পড়ছে। এতে বাজার প্রায় সব সময় চাপে থাকছে।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের অনেকটা অপুষ্ট শিশুর মতো বড় হচ্ছে। সুষ্ঠু বিনিয়োগ ধারা সৃষ্টি করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সৃষ্টির জন্য কোনো প্রণোদনা নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত, লেনদেন ও সূচক কতটা বাড়ল, সেদিকে নজর না দিয়ে বাজারের টেকসই উন্নতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী শ্রেণির দিকে নজর দেওয়া। তাহলে বাজারের অস্থিরতা কাটবে।

সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ ও দেশ প্রতিক্ষণ ডটকম